জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, আইনি দিক থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা না থাকলেও ফ্যাসিবাদী গণহত্যাকারী মানবতাবিরোধী দলটিকে কোনোভাবেই বাংলাদেশে রাজনীতি করতে দেয়া হবে না। এ জন্য যদি আমাদের আবারও রক্ত দিতে হয়, আমরা দেয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। তারপরও কোন আওয়ামী লীগকে আর পুনর্বাসিত হতে দেয়া হবে না।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ সাতমাথা এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মানুষের ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছে, তারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করে যে ভয়ংকর পাপ করেছে সেই পাপ থেকে মুক্তির উপায় এখন পর্যন্ত অবলম্বন করেনি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার এখনও হয়নি, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের সহযোদ্ধাদের হুমকি দিচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় খুনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। সে কারণে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের মানুষ আর কোনোদিন গ্রহণ করবে না। তাদের প্রতিরোধ করার জন্য যা করার তাই করা হবে।
নাগরিক কমিটির এই নেতা বলেন, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক অবস্থায় আসেনি। আমরা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে বার বার অন্তর্বর্তী সরকারকে জানিয়েছি। পুলিশ এখনও তাদের নৈতিক শক্তিতে ফিরে যেতে পারেনি। আমরা অভ্যুত্থানের পর দেখেছি, দেশের থানাগুলো একেবারে ডিসফাংশনাল ছিল। এখন অবশ্য থানাগুলো কিছু কাজ করছে, কিন্তু থানাগুলোতে অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের যে মামলাগুলো হয়েছে সেটা নিয়ে একটা পক্ষ মামলাবাজির চেষ্টা করছে। সেখানে পুলিশের নির্লিপ্ততা এবং নীরব থাকার প্রবণতা লক্ষ্য করছি আমরা। এটা শহীদদের যে চেতনা, সুষ্ঠু স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা হিসেবে আমরা দেখছি।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে গেছে। সরকার পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ায় তাদের কিছু কিছু কার্যকলাপ মাঝে মাঝে ভালো দেখা যাচ্ছে। যেমন ঢাকার কেরানীগঞ্জে ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টার ঘটনায় তাদের শক্ত অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। তারপরও পুলিশ ও সেনাবাহিনী এখনও শক্ত ভূমিকা গ্রহণ করেনি। আমরা জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে আমাদের আহ্বান থাকবে, পুলিশ প্রশাসনকে দিয়ে যদি কাজ না হয় তাহলে রিশাফল করা হোক। প্রয়োজনে গণঅভ্যুত্থানে যারা অংশগ্রহণ করেছে যারা শিক্ষিত ও তরুণ তাদের পুলিশ বাহিনীতে নিয়ে আসার দাবি জানান তিনি। তাদেরকে দিয়েই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বাত্মকভাবে কাজ করা যাবে বলে মনে করেন।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের জনগণ চায় নতুন রাজনৈতিক শক্তির নেতৃত্বে থাকবে তরুণরা। আমরা ছাত্র-তরুণ মিলে নয়া রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার কথা বলছি, নাগরিক কমিটি যে ভাষা উৎপাদন করছে সেই ভাষার ভিত্তিতে দল গঠিত হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যমান যে আদর্শিক পক্ষগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে দলাদলিতে লিপ্ত হতে চাই না। দেশের জন্য আমরা মধ্যম রাজনৈতিক চর্চা করতে চাই। আমাদের রাজনৈতিক ভিত্তি হবে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়া নয়। যারা দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিতে চায় বা চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা আমাদেরে কর্তব্য।
তিনি আরও বলেন, দেশের সব স্তরের মানুষ চান, নতুন একটি রাজনৈতিক শক্তির আবির্ভাব ঘটাতে। আমরা বিশ্বাস করি, সামনের দিনে যারা বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে- তারা মানুষের দিশারী হয়ে থাকবে।