গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ‘আধা আবছা’ চিন্তাভাবনার স্তরগুলো ভেঙে বের হতে না পারায়, যেভাবে আশা ছিল সেরকম না হওয়ায় গণঅভ্যুত্থান অপূর্ণ রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকালে বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত একক বক্তৃতায় এমন মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, "গণঅভ্যুত্থান পূর্ণ বিজয়ের দিকে যায়নি। আমরা যেভাবে আশা করেছিলাম সেদিকে যায়নি। ফলে গণঅভ্যুত্থান অপূর্ণ রয়ে গেছে। আমরা আধা আবছা চিন্তাভাবনার স্তরগুলো ভেঙে বের হতে পারি নাই। গণঅভ্যুত্থান মূলত সকল আইন ও সংবিধান ভঙ্গ করে হাজির হয় এবং জনগণ হাজির হয়, বর্তমান সমস্ত পুরনো আইন ভেঙে দিয়ে নতুন আইন কিংবা নতুন রাষ্ট্র গঠন করবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে।
"আমরা কথায় কথায় সংবিধান শব্দটা ব্যবহার করি। সংবিধান ইউজলেস। পৃথিবীতে যখন সংবিধান ছিল না, সমাজ ছিল। পৃথিবীতে যখন সংবিধান থাকবে না তখন সমাজও থাকবে রাষ্ট্রও থাকবে।"
রাষ্ট্রের সংজ্ঞা ও বিস্তৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, "জনগণের যে অভিপ্রায়টা বিভিন্নভাবে ব্যপ্ত হয়, বিভিন্নভাবে হাজির হয়, বিভিন্নভাবে বর্তমান হয় তাকেই ব্যপ্ত অর্থে রাষ্ট্র বলে। রাষ্ট্রের এই ধারণাটা আমরা অনেকে জানি না। তাই রাষ্ট্র বলতে আমরা কেউ আইন বুঝি, রাষ্ট্র বলতে আমরা কেউ বল প্রয়োগের হাতিয়ার বুঝি।
গণশক্তির আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অতি সহজে পরবর্তী স্তরের মজবুত কাঠামোতে ঢোকার সুযোগ তৈরি হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, "যখনই গণশক্তির মধ্য দিয়ে আপনি বিদ্যমান ক্ষমতাকে উৎখাত করে ফেলেছেন, তৎক্ষণাৎ তা গাঠনিক শক্তিতে রূপ নেয়। যেদিন শেখ হাসিনা পালিয়েছে, আন্দোলনের যারা নেতৃত্বে গাঠনিক শক্তি তৎক্ষণাৎ তাদের কব্জায় এসে গিয়েছে। তারা আইনের ঊর্ধ্বে উঠে গিয়েছে, কোনো আইন আর তাদেরকে ওর অধীনে নিতে পারবে না। তারা বলতে পারত এখন আমরা ক্ষমতা নিলাম, আমাদের আদেশে দেশ চলবে। এটা অবশ্যই হয়।
তারা সেরকম কোনো ফরমান দিতে পারে নাই। তারা শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান ও তার রাষ্টপতি চুপ্পুর অধীনে শপথ নিয়েছে। ফলে পুরো গণঅভ্যুত্থানটায় আমরা পিছিয়ে পরলাম।
সামনে এখন অদ্ভুত চ্যালেঞ্জ হাজির হওয়ার কথা তুলে ধরে ফরহাদ মজহার বলেন, "একদিকে গণঅভ্যুত্থানটা অপূর্ণ। অপরদিকে এটাকে নস্যাৎ করার জন্য একটার পর একটা কাউন্টার ক্যু পালটা অভ্যুত্থানের চেষ্টা চলত। গণঅভ্যুত্থানের সরকারের অবশ্যই সংবিধান বাতিল করবার আর নিজেদেরকে নিজেরা নতুনভাবে গঠন করবার পূর্ণ অধিকার আছে।"
‘পাশ্চাত্য ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে’ একান্ত একটি রাজনৈতিক ধারণা হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, "কিন্তু আমাদের এখানে সেকুলারিজম সাংস্কৃতিক ধারণা হিসেবে। এটা মারাত্মক জিনিস। ফলে আমরা নতুন একটা বিভাজন দেখলাম। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পরে আমরা অতি সহজে পারতাম আমাদের বাঙালি ঘরনার মধ্যে ধর্মের মর্ম ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া। আমরা তা করি নাই।"
বাংলা একডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতারসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।