Published : Saturday, 7 December, 2024 at 10:03 PM
বাংলাদেশে ‘হিন্দু নিপীড়ন’র ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে ভারতের দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দেশটির হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘসহ (আরএসএস) কয়েকটি সংগঠন।
আগামী মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) এই কর্মসূচি পালন করবে বলে জানিয়েছে তারা।
প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার (পিটিআই) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়। এরপর প্রতিবেদনটি ভারতের প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রচার করা হয়।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’-এর (এফওসি) বৈঠকে যোগ দিতে আগামী সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকা সফর করবেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। অর্থাৎ বিক্রম মিশ্রির সফরের একদিন পরই বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে।
গত শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরের কথা জানায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগেই দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
খবরে বলা হয়েছে, ‘সিভিল সোসাইটি অব দিল্লি’ নামের ব্যানারে বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নেয়া হলেও উদ্যোগটা প্রধানত ক্ষমতাসীন দল বিজেপির অঙ্গ সংগঠন আরএসএসের।
আরএসএসের দিল্লি শাখার গণমাধ্যম বিষয়ক প্রধান রজনীশ জিন্দাল শুক্রবার দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বলেন, নাগরিক সমাজের এই কর্মসূচি ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালিত হয়।
জিন্দাল অভিযোগ তুলে বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুসহ সব সংখ্যালঘুর ওপর অত্যাচারের ঘটনায় সারা ভারত ক্ষুব্ধ। ওই কর্মসূচিতে দেশের ২০০টির বেশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ হাইকমিশনে তারা একটি স্মারকলিপি পেশ করবেন। স্মারকলিপি দেবেন জাতিসংঘ, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কাছেও। এতে প্রত্যেককে বাংলাদেশে ‘হিন্দুদের ওপর অত্যাচার’ বন্ধে ব্যবস্থার কথা বলা হবে।
সংগঠকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দিল্লির সব বাজার কমিটি, আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের সংগঠন, চিকিৎসক, আইনজীবী, ছাত্রসংগঠন ও দুর্গাপূজা, ছটপূজা, রামলীলার আয়োজক এবং শিখ ধর্মস্থান গুরুদ্বার পরিচালন কমিটির সদস্যদের ওই অভিযানে অংশ নিতে বলা হয়েছে।
আরএসএসের এই কর্মসূচি ঘোষণা নিশ্চিতভাবেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সফরের ওপর ছায়া ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র অনুযায়ী, বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফর ‘স্ট্রাকচার্ড’ হলেও সফরের প্রধান উদ্দেশ্য সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তোলার পাশাপাশি সংখ্যালঘু স্বার্থ ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কাজেই ভারত চাইবে না, এমন কিছু হোক, যা পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তোলে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের ভিত্তিহীন অভিযোগ করে আসছে নয়াদিল্লি। সম্প্রতি রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের পর গত কয়েকদিন ধরে ভারতে বাংলাদেশবিরোধী মিছিল-সমাবেশ হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় আগুন এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
এরপর গত সোমবার (২ ডিসেম্বর) আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, ভাঙচুর ও পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়। যদিও এই ঘটনার পর দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এর কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। শুধু তাই নয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে।