আগে আসে আবার পরে যায় দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের শীত। হিমালয়ের কোলঘেঁষে অবস্থিত জেলাটিতে ঠান্ডা আবহাওয়া জেঁকে বসেছে। পঞ্চগড়ে গত দুই দিন ধরে ১০ ডিগ্রির ঘরে রয়েছে তাপমাত্রা। অগ্রহায়ণের মাঝামাঝিতে এসে তীব্র শীতে কাঁপছে জেলার মানুষ। পর্যটকদের কাছে এই শীত উপভোগ্য হলেও ভোগান্তি বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের।
রোববার (১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কার্যালয়। গতকাল ৩০ নভেম্বর তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পঞ্চগড়ের প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সহকারী কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ বলেন, দুই দিন ধরে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির ঘরে। রবিবার সকাল ৯টায় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। ভোর ৬টায় রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ৩০ নভেম্বর ভোর ৬টায় তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছিল। এখন দিন যত যাবে তাপমাত্রা আরও কমতে থাকবে।
বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, ঝলমলে রোদ নিয়ে জেগে উঠেছে ভোরের সূর্য। সূর্যের আলো ছড়ালেও অনুভূত হচ্ছে কনকনে শীত। তবে শীত উপেক্ষা করেই কাজে ছুটছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। নবান্নের ধান মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঘরের কৃষানিরা। ভোরে শাকসবজি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
স্থানীয় মেহের আলী, হোসেন আলীসহ কয়েকজন বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই ঠান্ডা বাড়তে থাকে। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত খুবই ঠান্ডা। মনে হচ্ছে পৌষ মাস। তবে সকাল ১০টার পর আর ঠান্ডা থাকে না। দিনে বেশ গরম এখনও। দুই রকম আবহাওয়ার কারণে সর্দিকাশিতে ভুগছি।
তবে শীত পর্যটকদের জন্য আনন্দের উল্লেখ করে হাবিব ও সুমন নামের কয়েকজন পর্যটক বলেন, রাজধানী ঢাকায় এখনও ফ্যান চালিয়ে ঘুমাতে হয়। সেখানে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসে শীত উপভোগ করছি আমরা। একদিকে বরফের পাহাড়, একই সঙ্গে শীত দুটোই উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।
এদিকে শীতে বেড়েছে জ্বর, সর্দি, কাশি, হাঁপানিসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগ। তেঁতুলিয়া ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালসহ জেলার পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশু ও বয়স্করা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে, ঠান্ডাজনিত রোগের কারণে জেলার হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন তিন-চারশ রোগী জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত নানা রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া প্রতিদিন গড়ে শতাধিক শিশু ও বয়স্ক রোগী চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
এবার হেমন্তের শুরু থেকেই উত্তরের এই জনপদে শুরু হয়েছিল শীতের আবহ। বর্তমানে দিনভর ঝলমলে রোদ থাকায় দিনে গরম অনুভূত হলেও বিকাল হতে না হতেই শুরু হচ্ছে শীতের অনুভূতি।