জনস্বাস্থ্য গবেষক ও খাবার স্যালাইনের অন্যতম উদ্ভাবক ড. রিচার্ড অ্যালান ক্যাশ মারা গেছেন। মৃত্যুকাল তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টি এইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের শিক্ষক ড. রিচার্ড ক্যাশ। ক্যাশ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিদেশে জনমত তৈরি, অর্থ সংগ্রহ ও স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার’ সম্মাননা প্রদান করে।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ব্র্যাকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ড. ক্যাশের মৃত্যুর সংবাদ জানিয়ে ব্র্যাক পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়।
সত্তরের দশকে প্রাণঘাতী ডায়রিয়ায় যখন হাজার হাজার মানুষ মারা যায়, তখন সহগবেষক হিসেবে খাবার স্যালাইন ফর্মুলার চূড়ান্ত রূপ দেন। তাদের এই যুগান্তকারী উদ্ভাবন ডায়রিয়া থেকে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর লাখো মানুষের জীবন রক্ষায় সহায়ক হয়েছে।
ড. ক্যাশ ১৯৪১ সালের ৯ জুন জন্মগ্রহণ করেন। জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও ড. রিচার্ড ক্যাশ বাংলাদেশকে তার দ্বিতীয় বাড়ি (সেকেন্ড হোম) বলে মনে করতেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু এবং সুদীর্ঘ সময়ের সহযাত্রী। বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিস্তৃত গবেষণা ও প্রভূত অর্জনের পেছনে তার অসামান্য অবদান রয়েছে।
ড. রিচার্ড ক্যাশ ১৯৬৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি মেডিকেল স্কুল থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে চিকিৎসক হিসেবে ঢাকার কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে (বর্তমান আইসিডিডিআর,বি) যোগদান করেন। এখানে তিনি অন্য গবেষকদের সঙ্গে মিলে ডায়রিয়া নিরাময়ে খাবার স্যালাইনের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা করে সফলতা অর্জন করেন।
১৯৬৮ সালে তারা কুমিল্লার মতলব হাসপাতালে এই চিকিৎসার প্রয়োগ নিয়ে বিস্তৃতভাবে কাজ করেন। আশির দশকে বাংলাদেশে ডায়রিয়ার এই চিকিৎসা সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্র্যাকের নেতৃত্বে সারাদেশে ‘ওটেপ’ (ওরাল থেরাপি এক্সটেনশন প্রোগ্রাম) কর্মসূচি শুরু হয়। এই কর্মসূচির আওতায় ব্র্যাক বাড়ি বাড়ি গিয়ে এক কোটি ২৫ লাখ মাকে হাতেকলমে খাবার স্যালাইন তৈরির শিক্ষা দেয়। এর ফলে বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার অর্ধেকে নেমে আসে। এ সময় টিকাদানের হার ছিল মাত্র ২ শতাংশ। পাঁচ বছরের নিচে শিশুমৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ২৫০ জন। পরে তা প্রায় শূন্যে নেমে আসে।
জনস্বাস্থ্য বিষয়ে দক্ষ রিচার্ড কর্মজীবনে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির জেমস পি. গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ, দিল্লির পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়াসহ সারাবিশ্বে জনস্বাস্থ্যের বেশকিছু স্কুলে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০০৬ সালে ব্র্যাকের যুক্তরাষ্ট্র অফিস প্রতিষ্ঠায় তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় দুই দশক ধরে ব্র্যাক ইউএসএ বোর্ডের সদস্য ছিলেন তিনি। রিচার্ড ক্যাশ হার্ভার্ড টি এইচ চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের একজন শিক্ষক হিসেবে ৪০ বছরেরও বেশি সময়ের একাডেমিক ক্যারিয়ারে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষিত করেছেন।