বিভিন্ন বয়সের মানুষই পিত্তথলিতে পাথরের সমস্যায় ভুগছেন। কর্মব্যস্ত জীবনে সময়ের পিছনে ছুটতে গিয়ে কিছু কিছু রোগের প্রকোপ বাড়ছে। তার মধ্যেই রয়েছে পিত্তথলিতে পাথরের (গল ব্লাডারে স্টোন) সমস্যাও। এই রোগের মূল উপসর্গ পেটে ব্যথা। নিয়মিত পেটে ব্যথাসহ আরও কিছু উপসর্গ রয়েছে এই রোগের। এ ছাড়াও কিভাবে বুঝবেন পিত্তথলিতে আপনার পাথর আছে কি না, চলুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
পাথর আসলে কী
পিত্তথলির পাথর আসলে ছোট ছোট বালুর দানার মতো থেকে শুরু করে মটরের দানা বা তার চেয়েও বড় শক্ত দানাদার বস্তু, যা বিভিন্ন রঙের ও বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে। এটা নির্ভর করে কী পদার্থ দিয়ে পাথর তৈরি হয় তার ওপর।
কোলেস্টেরল, বিলিরুবিন বা ক্যালসিয়াম ইত্যাদি পদার্থের সংমিশ্রণে তৈরি এই পাথরগুলো পিত্তরসের সঙ্গে মেশানো অবস্থায় থাকে এবং হালকা বাদামি, ময়লাটে সাদা বা কুচকুচে কালো রঙের হতে পারে। পেটের ডানদিকে যকৃতের পেছনে ও তলার দিকে পিত্তথলি থাকে। পিত্তরস তৈরি করাই এর কাজ। খাবার হজমে, বিশেষ করে চর্বিজাতীয় খাবার হজম করতে পিত্তরস দরকার হয়। নানা কারণে পিত্তথলিতে বিভিন্ন পদার্থ জমে গিয়ে পাথরের সৃষ্টি করে।
পিত্তথলির পাথর যখন তার সঙ্গে সংযোগকারী পিত্তনালির পথ বন্ধ করে দেয় অথবা পিত্তথলির প্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন কিছু উপসর্গ দেখা দেয়।
সেগুলো হলো:
হঠাৎ করে পেটে তীব্র ব্যথা, যা কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
বমি বমি ভাব।
চোখ ও চামড়া হলুদ বর্ণ ধারণ করলে বুঝতে হবে জন্ডিস হয়েছে। সাধারণত পিত্তনালির কোনো সমস্যা দেখা দিলেই জন্ডিস হয়ে থাকে।
জ্বর বা শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া।
যাদের পিত্তথলির পাথরের ঝুঁকি বেশি
যেকোনো বয়সেই পিত্তথলিতে পাথর হতে পারে। তবে-
১. যাদের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বা যাদের মেদবাহুল্য রয়েছে।
২. নারী।
৩. বয়স ৪০ বা এর বেশি।
৪. চর্বিজাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খেলে।
৫. শাকসবজি কম খেলে।
৬. ইস্ট্রোজেনসম্পন্ন ওষুধ খেলে।
৭. অতি দ্রুত ওজন হ্রাস করলে।
৮. বিশেষ ধরনের রক্তরোগ হলে।
৯. লিভার বা যকৃতের রোগ হলে।
জটিলতা
১. কোলেসিস্টাইটিস বা পিত্তথলির প্রদাহজনিত জটিলতা হতে পারে।
২. পিত্তনালির প্রতিবন্ধকতাজনিত জটিলতার আশঙ্কা আছে।
৩. অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহজনিত জটিলতা বা প্যানক্রিয়াটাইটিস।
৪. পিত্তথলির ক্যানসার। যদিও পিত্তথলির ক্যানসারের ঝুঁকি খুবই কম।
চিকিৎসা
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পিত্তথলির অপসারণই পিত্তথলির পাথরজনিত উপসর্গের একমাত্র চিকিৎসা। তাই পিত্তথলির পাথর হওয়ার উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত শল্যচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।