Published : Sunday, 20 October, 2024 at 7:34 PM, Update: 20.10.2024 7:41:09 PM
এইচএসসি পরীক্ষার প্রকাশিত ফল নিয়ে আপত্তি তুলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাওয়ে গিয়েছিল একদল শিক্ষার্থী। সেখানে তাদের সঙ্গে মারামারি বাধে বোর্ড কর্মচারীদের। তাতে কয়েকজন আহত হয়েছে।
রোববার (২০ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে।
আহতরা হলেন- সরকারি শাহবাজপুর কলেজের মো. সাগর (১৭), নারায়ণগঞ্জ কলেজের শাহরিয়ার (১৮), কিশোরগঞ্জের ওয়ালি নেওয়াজ খান কলেজের ওয়াহিদ (১৯), বাঘাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ফাহমিদা হোসেন (১৭) ও গোপালগঞ্জের শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজের আশুতোষ (১৮)।
পাঁচ দিন আগে প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলে বৈষম্য করা হয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে রোববার দুপুরে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ডে গিয়েছিল ওই শিক্ষার্থীরা।
বোর্ডের কর্মকর্তাদের দাবি, শিক্ষার্থীরা বোর্ডের ভেতরে ঢুকে ভাংচুর করে। এমনকি তারা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কক্ষেও ভাংচুর চালায়। তখন কর্মচারীরা তাদের থামানোর চেষ্টা করেছিল।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা বলছে, তারা তাদের দাবি আদায়ে কথা বলতে ভেতরে গেলে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের ওপর হামলা করে। এতে একজন নারী শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে যাওয়াসহ গুরুতর আহত হয় কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের প্রতি বৈষম্য করে রেজাল্ট প্রকাশ করেছে। আমাদের এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের মূল্যায়ন করে এইচএসসি রেজাল্ট দেওয়ার কথা। কিন্তু একজন শিক্ষার্থীর সব সাবজেক্টে এ+ পেয়েছে কিন্তু একটি সাবজেক্টে সে ডি গ্রেট পেয়েছে, এটা কেন করল? আমাদের কথা হচ্ছে যেহেতু আমাদের এসএসসি রেজাল্ট দেখে মূল্যায়ন করার কথা ছিল, সেটা বিবেচনা করে এইচএসসি রেজাল্ট প্রকাশ করা উচিত ছিল। কিন্তু আমাদের রেজাল্ট অনেক খারাপ হয়েছে। তাই আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষা বোর্ডের সামনে অবস্থান করছিলাম। কিন্তু শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারী-কর্মকর্তারা ভেতর থেকে পাথর লাঠি দিয়ে, স্টিলের স্কেল দিয়ে আঘাত করে আমাদের রক্তাক্ত করে।
ঘটনাস্থলে থাকা চকবাজার থানার ওসি রেজাউল হোসেন বলেন, ফলাফলে বৈষম্য হয়েছে- এই অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এর প্রতিবাদে তারা বোর্ডের সামনে অবস্থান করছিলেন। তারা একপর্যায়ে বোর্ডের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এসময় নথিপত্রসহ অন্যান্য জিনিসপত্র রক্ষায় বোর্ডের কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের বাধা দেন। তখন ধাক্কাধাক্কিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে আমি শুনেছি।
এর আগে দুপুর ২টায় এই মারামারির পর বিকাল ৫টায়ও কিছু শিক্ষার্থী বোর্ডের সামনে অবস্থান করছিল। তারা প্রতিনিধি ঠিক করছিল, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য।
গত ১৫ অক্টোবর এইচএসসি-সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলছেন, ইতিমধ্যে যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তা বৈষম্যমূলক। এ জন্য তারা সবগুলো বিষয়ের ওপর ‘ম্যাপিং’ করে ফলাফল নতুন করে প্রকাশের দাবি জানাচ্ছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রকাশিত ফলাফল বৈষম্যমূলক। সব কটি বিষয়ের ওপর সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল প্রকাশ করতে শিক্ষা বোর্ডকে বলেছি। আমরা এসএসসি পরীক্ষায় পাওয়া নম্বরের ভিত্তিতেই সব বিষয়ের ওপর সাবজেক্ট ম্যাপিং করার দাবি জানাই।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার কারণে গত ১৮, ২১, ২৩ ও ২৫, ২৮ জুলাই এবং ১ ও ৪ আগস্টের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। সবশেষে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন সময়সূচি প্রকাশ করে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। এরপর অবশিষ্ট পরীক্ষা না নেওয়ার দাবি করেন পরীক্ষার্থীরা। আর অটো পাস ঘোষণা না দিয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণার দাবি জানান পরীক্ষার্থীরা। পরে অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো আর না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যেসব বিষয়ে পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর ক্ষেত্রে সাবজেক্ট ম্যাপিং হবে।
গত ১৫ অক্টোবর ফল প্রকাশিত হয়। এবার পরীক্ষায় মোট অংশ নেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। আর ফেল করেন ২ লাখ ৯৫ হাজার ৭৪৯ জন। সাবজেক্ট ম্যাপিয়ে সব বিষয় পাস করলেও অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হন এসব পরীক্ষার্থী।