দেশে ফিরে আবারও কারাগারে মাহমুদুর রহমান। রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে আত্মসমর্পণের পর ঢাকার সিএমএম আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
মামলাটি দায়ের হয়েছিল ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার আমলে। অভিযোগ ছিল পরিকল্পিত। পরিকল্পিত বানোয়াট মামলার খেসারত মাহমুদুর রহমানকে দিতে হচ্ছে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের আমলেও।
দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসনে থাকার পর শুক্রবার দেশে ফিরেছিলেন তিনি। মা’র অসুস্থতার খবর পেয়ে ইস্তানবুল দেশে ফিরে আসেন। তার মা অধ্যাপক মাহমুদা বেগম গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
শুক্রবার দেশে ফিরেই বিমানবন্দরে ঘোষণা করেছিলেন পরিকল্পিত বানোয়াট মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন। সে মোতাবেক রবিবারই তিনি ঢাকার সিএমএম আদালতে যান আত্মসমর্পণের জন্য।
বানোয়াট অভিযোগে, ফরমায়েশি রায় হয়েছিল আদালত এবং সরকার সকলেই জানেন। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনে এই মামলাটি ছিল পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা। তারপরও সরকার মামলাটির রায় প্রত্যাহারের কোন উদ্যোগ না নিয়ে বরং মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর আয়োজন করে রাখে।
অনেকেই বলেন, রায়ে কারাদণ্ড দেয়া হলে কারাগারে না যাওয়া পর্যন্ত আপিলের সুযোগ নেই। এটাই আইন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমান সরকার দেশের কোন আইনে বা সংবিধানের কোন ধারা অনুযায়ী ক্ষমতা গ্রহন করেছে? বিপ্লবের মাধ্যমে এই সরকার আইন ও সংবিধানের বাইরে গঠিত হয়েছে। ফ্যাসিবাদের নিপীড়ন থেকে বাঁচার জন্যই মানুষ জীবন দিয়ে বিপ্লব করেছে। সুতরাং একই পদ্ধতিতে বিপ্লবী সরকার মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদের দেয়া রায় বাতিল করার উদ্যোগ নেয়াটাই ছিল সময়ের দাবি। কিন্তু সরকার এটা করতে চরমভাবে অবহেলা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আইন ও সংবিধান বহির্ভূতভাবে গঠিত সরকার আইনের দোহাই দিয়ে মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠিয়েছে।
মামলাটি কেন ভুয়া, এই প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক। মামলাটি ভুয়া হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে।
১. মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।
২. অন্য একটি মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে এই প্রসঙ্গটি আনা হয়েছিল। সেই দেশের আদালত বিষয়টিকে নাকচ করে দিয়ে আমলেই নেয়নি।
৩. যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ব্যর্থ হয়ে পরিকল্পিতভাবে ঢাকার পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় প্রবীণ ও প্রখ্যাত সাংবাদিক শফিক রেহমানকেও আসামী করা হয়। একই সঙ্গে আসামী করা হয় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে। যখন এই মামলাটি দায়ের করা হয়, আমার দেশ সম্পাদক তখন কারাগারেই বন্দি ছিলেন।
৪. এই মামলায় সাক্ষী দিতে সজীব ওয়াজেদ জয় ঢাকায় এসেছিলেন। তিনি স্বাক্ষ্য দেয়ার দিনে আদালতে ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে।
৫. সজীব ওয়াজেদ জয় তার পরিকল্পিত স্বাক্ষ্য দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় বিচারক আসাদুজ্জামান নুর এজলাস থেকে দৌড়ে নামেন এবং জয়ের পেছনে পেছনে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে আসনে।
৬. মামলাটি পরিচালিত হয়েছিল এক রকম ক্যামেরা ট্রায়ালের মত। কারণ, এই মামলাটি চলাকালীন সরকার পক্ষের আইনজীবী ছাড়া আর কাউকে প্রবেশের অনুমতি থাকতো না।
৭. মামলাটি চলমান থাকা অবস্থায় নকল নথিপত্র বিচারক আসাদুজ্জামান নুরের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে রাখা হত।
৮. ঘটনার অভিযোগ আমেরিকায়। সেই দেশের আদালতে মামলাই আমলে নেয়নি। কারণ আমেরিকার আদালতে ভুয়া মামলা করার কোন সুযোগ নাই।
এই ভুয়া মামলায় আমার দেশ সম্পাদক ও যায়যায় দিন সম্পাদককে ফরমায়েশি রায়ে ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল।
সরকার কী করতে পারতো?
এই সরকার ক্ষমতায় আসার ২ দিনের মাথায় ভারতপন্থি পত্রিকা প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। রোজিনা ইসলামের মামলাটি ছিল সচিবালয় থেকে ফাইল চুরির অভিযোগে। এই ফাইল চুরি সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা হাতেনাতে ধরেছিলেন। তার মামলাটি সরকার ক্ষমতায় এসেই প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় আইন উপদেষ্টা নিজে।
প্রশ্ন হচ্ছে, রোজিনা ইসলামের মামলা স্ব-প্রণোদিত হয়ে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে পারলে, মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ভুয়া মামলাটি কেন প্রত্যাহার করা সম্ভব হয়নি?