Published : Tuesday, 24 September, 2024 at 1:25 PM
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের এক নবীন শিক্ষার্থীকে মধ্যরাতে মানসিক হয়রানি ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে মার্কেটিং বিভাগের দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। হয়রানির পাশাপাশি ওই শিক্ষার্থীকে শিবির ডেকে নিয়ে এসে মারার হুমকিও দেয়া বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে গতকাল সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম । তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থী হলেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অন্তর বিশ্বাস এবং একই বিভাগের দ্বিতীয় শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান নাবিল।
গত রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুরের লেবুবাগান এলাকার ‘বিশ্বাস ম্যানসন’ ছাত্রাবাসে মোহাম্মদ রকি মানসিক নির্যাতন, হয়রানি ও হুমকির শিকার হন। তিনি গতকাল রাত সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন।
অভিযোগপত্রে মোহাম্মদ রকি উল্লেখ করেছেন, ‘আমি মোহাম্মদ রকি গতকাল রোববার রাত পৌনে ১২টা থেকে প্রায় দেড়টা পর্যন্ত মানসিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছি। ‘‘বিশ্বাস ম্যানসন’’ ছাত্রাবাসের ২০১ ও ২০৫ নম্বর রুমের দুজন শিক্ষার্থী গতকাল রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে আমার কক্ষে আসেন। শুরুতেই তারা আমাকে নানা রকম বিব্রতকর প্রশ্ন করেন। ফলে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হই। কথাবার্তার একপর্যায়ে তারা আমাকে বলেন, ‘‘তোকে হলের গেস্টরুমে নিয়ে যাব, গেস্টরুমে নিয়ে গিয়ে তোকে আদর আপ্যায়ন করব।” এরপর তারা বলেন, ‘‘শেষবারের মতো তোর মাকে কল দে, কল দিয়ে বলবি আর কোনো দিন দেখা নাও হতে পারে, আমি কোনো ভুল করলে, আমাকে মাফ করে দিও।” একপর্যায়ে তারা বলেন, ‘‘আবরার ফাহাদকে কীভাবে মারা হয়েছিল জানিস?” আমি বলি- “জ্বি ভাই, পিটায়ে মারা হয়েছিল।” তারপর তারা বলেন, ‘‘তোকে এভাবে মারলে তখন কি করবি?” তারপর আমি চুপ থাকি।’
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করেন, ‘তারা হুমকি দিয়ে বারবার আমাকে হলের গেস্টরুমে যেতে বলেন। আমি যেতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে বলেন, ‘‘তুই যদি হলের গেস্টরুমে যেতে না চাস, তাহলে মেসে শিবির ডেকে নিয়ে এসে তোকে মারব।” এরপর তারা আমাকে বলেন, ‘‘তোর রুমমেটদের সেমিস্টার ফাইনাল ৭ তারিখে শেষ হবে। ৮ তারিখ রাতে তোর সঙ্গে আমরা পার্টি দেব।” এরপর তারা আনুমানিক রাত দেড়টার দিকে রুম থেকে বের হয়ে যায়। এমতাবস্থায় আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা। একজন নতুন শিক্ষার্থীকে যেভাবে র্যাগিং দেয়া হয়েছে, সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা শিক্ষক হিসেবে এই বিষয়গুলোকে কখনোই প্রশ্রয় দিতে পারি না। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগই করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ শাস্তি যেভাবে নিশ্চিত করা যায়, আমরা সে চেষ্টাই করব। ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তির তথ্যগুলো আমরা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বিভাগে প্রেরণ করব। বিভাগীয় একাডেমিক কমিটি একটা সুপারিশমালা তৈরি করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিকে পেশ করবে। সেই অনুযায়ী শৃঙ্খলা কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।’