Published : Friday, 20 September, 2024 at 12:50 PM
সপ্তাহ ব্যবধানে ফের অস্থির হয়ে ওঠেছে রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার। দাম বেড়ে গেছে মাছ, মাংস ও শাক-সবজিসহ প্রায় প্রতিটি পণ্যের। এতে বিপাকে ভোক্তারা। তাদের মতে, শুধু সরকার পরিবর্তন হলেই চলবে না, অতিমুনাফা করার মানসিকতাও পরিবর্তন করতে হবে ব্যবসায়ীদের।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সাপ্তাহিক ছুটির দিন সকালে কেরানীগঞ্জের আগানগর এবং রাজধানীর নয়াবাজার ও কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায় এ চিত্র।
ব্যবসায়ীরা জানান, সম্প্রতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে ফসল, মাছ ও মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বাজারে কমে গেছে পণ্যের সরবরাহ। তাছাড়া সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী।
ক্রেতাদের অভিমত, সরকার বদলালেও বাজারের চিত্র বদলায়নি; অসাধুরা এখনও লুটে নিচ্ছে টাকা। কামরুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর কয়েকদিন দাম কিছুটা কমেছিল। কিন্তু বর্তমানে আবারও সেই একই চিত্র। সরকার বদলালেও বদলায়নি বাজারের চিত্র। এখনও বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটছেন ব্যবসায়ীরা।
শারমিন নামে গৃহিনী বাজার করতে এসে বলেন, দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে অতি মুনাফা করার মানসিকতা ঢুকে গেছে। তারা সুযোগ সন্ধানী। কোনো একটা অজুহাত পেলেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এই মানসিকতা যতদিন না পরিবর্তন হচ্ছে, ততোদিন কোনো সরকার বা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা বাজারে স্বস্তি ফেরাতে পারবে না।
বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৮০-১০০ টাকা, করলা ৬০-৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, লতি ৬০-৮০ টাকা, কহি ৬০ টাকা ও পটোল ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, প্রতি কেজি পেঁপে ২৫-৩০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, টমেটো ১৬০ টাকা, শিম ২০০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
এছাড়া, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়, আর প্রতি পিস লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। বাজারে লালশাকের আঁটি ২০ টাকা, পাটশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ২০ টাকা, ডাঁটাশাক ২০ টাকা, কলমিশাক ১০-১৫ টাকা ও পালংশাক ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কমায় ও সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সবজির দাম বেড়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা সুমন বলেন, কিছু কিছু সবজির দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে কমেছে হাতেগোনা কয়েকটির দাম। সম্প্রতি বন্যায় ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে, যার প্রভাবে দাম বাড়ছে।
তবে গত ৪-৫ দিন আগে বৃষ্টির কারণে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া কাঁচা মরিচের দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে নেমে এসেছে ১৬০-১৮০ টাকা। অথচ গত সোমবারও (১৬ সেপ্টেম্বর) মরিচ বিক্রি হয়েছে ২৮০-৩০০ টাকায়।
পাইকারিতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়
মরিচ ব্যবসায়ী হাসনাত বলেন,বৃষ্টির কারণে কয়েকদিন আগে অতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছিল কাঁচা মরিচের দাম। এখন আবার কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে পাইকারিতে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে দাম আরও কমে আসবে।
এদিকে, সরকার ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দেয়ার পর আরও চড়েছে বাজার। বিক্রেতারা বলছেন, দাম নির্ধারণের আগে বাজারে কম দামেই বিক্রি হয়েছে ডিম ও মুরগি। কিন্তু দাম বেঁধে দেয়ার পর খামারিরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারেও।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী কামাল বলেন, বাজারে কোনো ঘাটতি নেই। সরকার দাম বেঁধে দেয়ার পর থেকেই পাইকারি বাজার ঊর্ধ্বমুখী। কারণ দাম বেঁধে দেয়ার পর খামারিরাও লাভের আশায় দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর প্রভাবে খুচরা বাজারেও দাম বাড়ছে।
বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০-১৮৫ টাকা, সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০-২৮০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৪০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। এছাড়া, জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়।
অপরিবর্তিত আছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এছাড়া, প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।
বাজারে মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, আর সাদা ডিম ১৫৫ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৩০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই চড়া চালের দাম। বর্তমানে মিনিকেট ৭১-৭২ টাকা, আটাশ চাল ৫৭-৫৮ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮২ টাকা, সুগন্ধী চিনিগুঁড়া পোলাওর চাল ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী রাকিব বলেন, গত এক-দেড় মাস ধরেই চড়া চালের বাজার। নতুন করে দাম না বাড়লেও, কমেনি।
তবে বাজারে সামান্য কমেছে পেঁয়াজের দাম। প্রতি কেজিতে ৫-১০ টাকা কমে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকায়। এছাড়া, ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০-১১৫ টাকা ও পাকিস্তানি ৯৫-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি দেশি রসুন ২২০-২৪০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২৪০-২৬০ টাকা ও মানভেদে আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৮০ টাকায়।
মাছের দামে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই। বেশিরভাগ মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৬০-৩৮০ টাকায়। এছাড়া, চাষের পাঙাশ ২০০-২২০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০-২৫০ টাকা, চাষের কৈ ২৪০-২৮০ টাকায়, চাষের শিং প্রতি কেজি ৫৫০-৬০০ টাকায়, কোরাল ৭৫০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ টাকা, আইড় ৭৫০-৮০০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৫০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাজারে ইলিশের দাম আকাশ ছুঁই ছুঁই। দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০-২৩০০ টাকায়। এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৭০০-১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৫০০-১৬০০ টাকা ও ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ১২০০-১৩০০ টাকা পর্যন্ত।
মাছের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত মাসে বন্যায় বেশকিছু অঞ্চলে চাষিদের মাছ ভেসে গেছে। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম কিছুটা বাড়তি।
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।
আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।