Desh Sangbad
Desh Sangbad
শিরোনাম: ■ রোগী খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কলকাতার হাসপাতাল ■ খুবি শিক্ষার্থীদের মারধর, ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া ■ তারা মনে করছে ঠান্ডা হয়ে গেছি, আমি ঠান্ডা হই নাই ■ নির্বাচনী রোডম্যাপ পেলে কেউ ষড়যন্ত্রের সাহস পাবে না ■ দেশ, সার্বভৌমত্ব ও অস্তিত্বের প্রশ্নে আমরা সবাই এক ■ দু-এক দিনের মধ্যে সুখবর আসছে ■ সংলাপে যেসব বিষয়ে কথা হয়েছে, জানালেন আসিফ নজরুল
আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ স্বামী, চিকিৎসা করতে সন্তান বিক্রি স্ত্রীর
Published : Monday, 9 September, 2024 at 6:35 PM

আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ স্বামী, চিকিৎসা করতে সন্তান বিক্রি স্ত্রীর

আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ স্বামী, চিকিৎসা করতে সন্তান বিক্রি স্ত্রীর

ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট রোববার দুপুরে গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে দিনাজপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়মিত চেকআপ করতে গিয়েছিলেন দিনাজপুরের কাটাপাড়া এলাকার দিনমজুর আব্দুর রশিদ। স্ত্রীকে গাইনি ওয়ার্ডে রেখে নিচে এসে টিকিট কাটছিলেন। এমন সময় হাসপাতালের ভেতরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনা ঘটলে গুলিবিদ্ধ হন আব্দুর রশিদ। তার পেটে, নাভিতে, পায়ে ও প্রস্রাবের রাস্তায় গুলি লাগে। হাসপাতালেই তাকে ভর্তি করা হয়, নেন চিকিৎসাও। কিন্তু হামলা-মামলার ভয়ে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি চলে যান আব্দুর রশিদ।

তিন দিন পর তার পেটে গুলিবিদ্ধ স্থানে পচন ধরলে ও ব্যথা শুরু হলে ৮ আগস্ট তিনি দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। রাতেই হয় অস্ত্রোপচার, এরপর আইসিইউতে। পর দিন বাড়িতেই ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম।

হাসপাতালের চিকিৎসা চললেও অনেক ওষুধ, অস্ত্রোপচারের সরঞ্জামাদিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে আব্দুর রশিদের খরচ হয় ৩৬ হাজার টাকা। এতে বিপাকে পড়ে দিনমজুর রশিদের পরিবার। কারণ তার মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই। থাকেন অন্যের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে। এই অবস্থায় উপায় না পেয়ে তিন দিনের মধ্যেই কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে দেন রোকেয়া বেগম।

রশিদের অবস্থা এখনও পুরোপুরি ভালো নয়, তার শরীরে আরও গুলি ও পিলেট রয়েছে। একটি পিলেট রয়েছে তার প্রসাবের রাস্তায়। ডান পায়ের উরুর উপরে রয়েছে আরও তিনটি। এ ছাড়াও হাতে ও পেটেও আরও রয়েছে বলে জানান রশিদ। প্রতিদিন ওষুধ লাগছে, প্রসাবের জন্য ড্রেন করে দেওয়া হয়েছে নাভি দিয়ে। সেই থলিও বদলাতে হয় কয়েকদিন পর পর। এরপর রয়েছে তার বড় সন্তান, তার দাদা-দাদি ও তার স্ত্রীর খাওয়া। সবমিলিয়ে এক অসহায় পরিবার।

চিকিৎসক তাকে জানিয়েছে, তার শরীরে আরও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। ফলে সন্তানকে বিক্রি করেও দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়েনি তার। 

রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমাকে নিয়ে হাসপাতালে যায় স্বামী। সেখানে আমার তার গুলি লাগে। পরে সেখানে আমার স্বামীর চিকিৎসা হয়। স্বামীসহ আমি বাড়িতে চলে আসি। এরপর ৮ তারিখে তার অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে অপারেশন হয়, পরদিন আমার মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। আমার আরেকটি সন্তান রয়েছে, সেটিও মেয়ে। আমার স্বামীর অপারেশনের জন্য বিভিন্ন ওষুধ ও জিনিসপত্র কিনতে হয়। তিন দিনে হাসপাতাল থেকে যেসব ওষুধ ও জিনিসপত্র দিয়েছে তা ছাড়াও আমাদের খরচের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৬ হাজার। এ জন্য আমি ২৫ হাজার টাকায় সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানকে এক দম্পতির হাতে তুলে দেই। চিকিৎসক জানিয়েছে, আমার স্বামীর আরও অপারেশন করতে হবে, আবার পুরোপুরি সুস্থও হতে পারবেন না।’

বাচ্চার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার তো খারাপ লাগছেই। কিন্তু স্বামীকেও বাঁচাতে হবে। স্বামীর আরও অপারেশন, সংসার চালানো। চিকিৎসক জানিয়েছে, আমার স্বামী আর স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবেন না। এখন দুটি মেয়েকে নিয়েও চিন্তা রয়েছে। একটি মেয়ে আমার কাছে আছে, আরেকটি মেয়ে অন্যের কাছে। তারা নাকি আমার মেয়েকে মানুষ করবে, বড় করবে, পড়ালেখা শেখাবে।’

গুলিবিদ্ধ রশিদ বলেন, ‘আমার তো দিনাজপুরে মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই। অন্যের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে আমি স্ত্রী ও সন্তানসহ থাকি। আমার বাড়ি পঞ্চগড়ের ভজনপুরে। সেখানে মার সৎ মা রয়েছে ও দুই ভাই রয়েছে। বাবার জমিজমাও নেই। গুলিবিদ্ধের ঘটনার সঙ্গে আমার কোনও অপরাধ ছিল না, স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর গুলি লাগে। কিন্তু এখন আমাকে যন্ত্রণা নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। স্ত্রী সেবাযত্ন করছে। আমাকে বলেছে, যদি বাচ্চাটাকে নিয়ে আসি তাহলে তোমার সেবাযত্ন ঠিকভাবে করতে পারবো না। প্রতিনিয়তই হাসপাতালে যেতে হচ্ছে, যেসব ওষুধ পাচ্ছি, তাছাড়াও বাইরের দোকান থেকেও কিনতে হচ্ছে। ছাত্ররা সহযোগিতা করছে, আবার কোনও কোনও ব্যক্তিও সহযোগিতা করছে। আমার আরও অপারেশন করা লাগবে, আমি বাঁচতে ও সুস্থ হতে চাই।’

দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. আব্দুস সালাম বলেন, ‘যেসব রোগী হাসপাতালে এসেছে তাদেরকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের দেওয়া যেসব ওষুধ ও সরঞ্জামাদি সাপ্লাই রয়েছে সেসব আমরা দিচ্ছি। আর যেসব নেই সেগুলো লিখে দেওয়া হচ্ছে।’

দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এ টি এম নুরুজ্জামান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ১৮২ জনের চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। অনেকেই এখনও ভর্তি রয়েছেন, বেশিরভাগই সুস্থ হয়ে বাড়িতে চলে গেছেন। যে কোনও সমস্যায় আমরা পরামর্শ প্রদান করছি।’

দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল রায়হান বলেন, ‘আমরা বাচ্চাটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’

দেশসংবাদ/এএসএম


আপনার মতামত দিন
বন্ধ হলো সীমান্তে দুই বাংলার মিলনমেলা
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
Wednesday, 4 December, 2024
শীতের হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে হিমালয়কন্যা
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
Sunday, 1 December, 2024
শীতে কাপছে তেঁতুলিয়া, তাপমাত্রা কত?
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
Thursday, 28 November, 2024
কুয়াশার চাদরে ঢাকা কুড়িগ্রাম, তাপমাত্রা ১৫.৬
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
Sunday, 24 November, 2024
পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা নামল ১৪ ডিগ্রিতে
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
Thursday, 21 November, 2024
আরো খবর
সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর >>
https://deshsangbad.com/ad/1699508455_1491666999_th.jpg
সর্বাধিক পঠিত
ফেসবুকে আমরা
সম্পাদক
এফ. হোসাইন
উপদেষ্টা সম্পাদক
ব্রি. জে. (অব.) আবদুস সবুর মিঞা
ঠিকানা
৮০২ ভিআইপি রোড, কাকরাইল
ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
Developed & Maintenance by i2soft
যোগাযোগ
ফোন: +৮৮ ০২ ৪৮৩১১১০১-২
মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৩ ৬০১৭২৯
ইমেইল: [email protected]
up