কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সচিবালয় ‘নবান্ন ভবন’ অভিমুখে পদযাত্রা শুরু হবে দুপুরে। এই পদযাত্রাকে ঘিরে হাওড়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) শহরের একাধিক পয়েন্টে বড় ব্যারিকেড তৈরির পাশাপাশি নামানো হচ্ছে ছয় হাজার পুলিশ, র্যাফ, ইএফআর ও স্ট্রাকো বাহিনী। সঙ্গে আছে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের শেল।
এছাড়া সাঁতরাগাছি, হাওড়া ময়দান, ফোরশোর রোড, লক্ষ্মীনারায়ণ তলা এবং মন্দিরতলায় বড় ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে নবান্ন ভবনের আশেপাশে গলির মুখগুলোতে ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। ব্যবস্থা রাখা হয়েছে জল কামান এবং ড্রোনের।
এদিন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন আইজি র্যাঙ্কের চার পুলিশ অফিসার ছাড়াও ডিআইজি এবং এসপি পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তারা।
রোববার কলকাতা পুলিশ জানিয়েছিল, মঙ্গলবার ভোর চারটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কলকাতার বেশ কয়েকটি রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। পুলিশের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বিদ্যাসাগর সেতু, খিদিরপুর রোড, তারাতলা রোড, সার্কুলার গার্ডেনরিচ রোড, হাইড রোডে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে জওহরলাল নেহরু রোড, আরআর অ্যাভিনিউ, রেড রোড, ডাফরিন রোড, মেয়ো রোড, এজেসি বোস রোড, এসএন ব্যানার্জি রোড, এমজি রোড, ব্র্যাবোর্ন রোড এবং হাওড়া সেতুতেও।
সোমবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার ও এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ বর্মা কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, এ অভিযান বেআইনি। অভিযানকারীরা পুলিশের অনুমতি নেননি। তবে গতকাল দুটি সংগঠনের তরফ থেকে ই-মেইল করে নবান্ন অভিযানের কথা বলা হলেও অনুমতি চাওয়া হয়নি।
তবে একই দিন পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযান শান্তিপূর্ণ হবে বলে জানানো হয়। বলা হয়, মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে নবান্ন ভবনের দিকে এগিয়ে যাবে। কেউ দলীয় পতাকা নয়, শুধু জাতীয় পতাকা নিয়ে যোগ দিতে পারবেন।
মিছিলে বিজেপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা অভিযানে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। তবে তৃণমূলে কেউ এতে অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর মুখোপাধ্যায়।
এর আগে ২১ আগস্ট আরজিকর কাণ্ডে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে ‘নবান্ন চলো’ অভিযানের ডাক দেয় রাজ্যের শিক্ষার্থীরা। এতে সমর্থন জানান পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপির বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী।
পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের ব্যানারে অভিযানে প্রত্যেক বাড়ি থেকে অন্তত একজন করে আসার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, কোনো অশান্তি নয়, পাশে থাকুক পুলিশও।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই দুই দফায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে দেখে অনেকেই সরকার ফেলার চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের সরকার জনগণের নির্বাচিত সরকার।’
নবান্ন হলো পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া শহরের একটি সরকারি ভবন। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সচিবালয় ও প্রধান প্রশাসনিক দপ্তর মহাকরণ ভবনের সংস্কারের জন্য বর্তমানে এই ভবনটি অস্থায়ীভাবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সচিবালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৩ সালের পাঁচ অক্টোবর এখানে সচিবালয় চালু করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরজিকর হাসপাতালের চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছে কলকাতা।
গত ৯ আগস্ট এই হাসপাতালেরই পোস্ট গ্র্যাজুয়েট দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। ঘরে বাইরে চাপের মুখে পড়ে অবশেষে ঘটনার তিন দিন পর অধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। তবে সকালে পদত্যাগের পর বিকেলে তাকে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের পদে নিয়োগ দেয় রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর। আর তারপর থেকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজেও শুরু হয় বিক্ষোভ।
শুক্রবার ডা. সন্দীপ ঘোষকে আটক করে সিবিআইয়ের আঞ্চলিক দপ্তর কলকাতার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। আর সেখানেই চলে টানা জিজ্ঞাসাবাদ।
কলকাতা পুলিশ ও গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতের ট্রেইনি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ওই পোস্টগ্রাজুয়েট ছাত্রী। দিবাগত রাত দুইটায় বাইরে থেকে খাবার এনে নৈশভোজ সারেন আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে। এরপর তিনি জরুরি বিভাগ ভবনের চারতলার একটি সেমিনার কক্ষে বিশ্রাম নিতে যান। পরদিন শুক্রবার সকাল আটটা নাগাদ তার নিথর দেহ দেখতে পান হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রীর বাড়িতে ফোনে খবর দিয়ে জানিয়ে দেয়, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ছুটে আসেন হাসপাতালের জুনিয়র-সিনিয়র চিকিৎসকেরা। তারা অর্ধনগ্ন মরদেহ দেখে অভিযোগ করেন, তাকে হত্যা করা হয়েছে। শুরু হয় চিকিৎসকদের আন্দোলন।
চিকিৎসকেরা দাবি তোলেন, ওই চিকিৎসক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার নিরপেক্ষ ময়নাতদন্ত, হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সোদপুরে বাড়ি ওই ছাত্রীর। মা–বাবার একমাত্র সন্তান ওই চিকিৎসক। তিনি এমবিবিএস পাস করার পর আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে চেস্ট মেডিসিন বিভাগে পোস্টগ্র্যাজুয়েট করছিলেন। ছিলেন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।