Published : Wednesday, 17 July, 2024 at 8:27 PM, Update: 18.07.2024 11:11:40 AM
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় পল্টন থানার মামলায় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণসহ সাতজনকে দুই দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
বুধবার আসামিদের আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড চাইলেও ঢাকা মহানগর হাকিম শান্ত ইসলাম মল্লিক শুনানি শেষে প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ সময় বিচারক হাই কোর্টের নির্দেশনা মেনে সতর্কতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদিন মেজবাহ এসব তথ্য দিয়েছেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে মঙ্গলবার সহিংসতার মধ্যে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। অভিযান চালিয়ে কার্যালয় থেকে ককটেলসহ বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের দাবি করে পুলিশ।
এ ঘটনায় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ২৬ জনের নাম বর্ণনা করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০০-৩০০ জনকে আসামি করে পল্টন থানায় মামলায় মামলা করা হয়।
আদালতে রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার রাত ১২টা ১৫ মিনিটের সময় বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ১০৫টি অবিস্ফোরিত ককটেল, দুটি পাইপগান, তিনটি ওয়ান সুটারগান, একটি পুরাতন ওয়ান সুটারগান, ম্যাগাজিনসহ একটি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি এবং ২১০টি বাঁশের লাঠি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর যে সাতজনকে রিমান্ডে পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ, মামলার এজাহারে তাদের নাম রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজি রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ (৩৮), মহানগর দক্ষিণ সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মো. নজরুল ইসলাম (৪৭), তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. ইমাম হোসেন (৩০), বিএনপি কর্মী মো. শাহাদাত হোসেন (৩২), মো. টেনু (৩৮), মো. মনির হোসেন (২৫), বিএনপি পার্টি অফিসের স্টাফ বরকত হাওলাদারকে (৩৭) মঙ্গলবার আদালতে তোলা হয়।
তারা বলেন, বিএনপি অফিস থেকে বিস্ফোরক এবং অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা সম্পূর্ণ বানোয়াট। পুলিশ থানা থেকে এসব এনে বিএনপি অফিসে জমা করে উদ্ধার দেখায়, যে কারণে কোনো গণমাধ্যমকে এ ঘটনা জানানো হয়নি এবং ঘটনাস্থলে কোনো গণমাধ্যমকর্মী আসেননি।
বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ভাষ্য- তুঙ্গে থাকা শান্তিপূর্ণ কোটা আন্দোলনকে নস্যাৎ করে বিএনপির ঘাড়ে দায় চাপানোর উদ্দেশ্যে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের এ মিথ্যা ঘটনা সাজানো হয়েছে।
এখানে অনেক মেধাবী সাবেক ছাত্র ও ছাত্র নেতা রয়েছেন। এ সময় অফিস স্টাফ বরকত কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, “আমি স্যার ওই খানের স্টাফ, আমাকে কেন ধরে আনা হল। আমি তো কোনো অপরাধ করি নাই। এ সময় বরকতকে উদ্বিগ্ন দেখালেও শ্রাবণসহ অন্যদের মধ্যে কোনো উৎকণ্ঠা দেখা যায়নি।
তখন বিচারক বলেন, এখানে রানিং, প্রেজেন্ট কোনো ছাত্র আছেন?
তখন প্রতিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, “না স্যার, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র আছেন।”
সাবেক ছাত্রদল নেতা শ্রাবণ কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দাবি করেন, তিনি কিছু দিন পূর্বে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের হামলায় আহত হয়ে এখন বাসায় থাকছেন। তাকে গভীর রাতে বাসা থেকে ধরে এনে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে। আদালতে আনার আগ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কী মামলা হয়েছে, তিনি জানতেন না।
মহানগর দক্ষিণ সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মো. নজরুল ইসলাম আদালতকে বলেন, “আমি সকালে বাজার করতে বের হলে শান্তিনগর বাজারের কাছ থেকে আমাকে ধরে আনা হয়েছে। এ মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমার মোবাইলে এখনও স্ত্রীর পাঠানো বাজারের লিস্ট রয়েছে।
অন্য একজন বলেন, আমি পুটপাতে প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বিক্রি করি। আমার কী দোষ স্যার, আমাকে কেন ধরে আনা হল? আমি ন্যায় বিচার চাই, স্যার।”
এ সময় বিচারক শান্ত ইসলাম মল্লিক আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, এখানে আমার সামনে বিস্ফোরক উদ্ধার, অস্ত্র উদ্ধার করে মামলার কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে। আবার আপনারা দাবি করছেন আপনারা নির্দোষ। তাহলে আমার কর্তব্য কী?
এ সময় আইনজীবী বলেন, “বুঝেছি, স্যার। যদি রিমান্ড মঞ্জুর করেন, তা যেন জেলগেইটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রায় ৪০ মিনিট শুনানি শেষে প্রত্যেককে দুই দিন করে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয় আদালত।