যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর ওপর হামলা নতুন কিছু নয়। দেশটিতে যখন আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী আমেজ শুরু ঠিক তখনই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী সভায় বন্দুক হামলা হয়েছে। কেবল ট্রাম্পই নন, বেশ কয়েকজন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও প্রার্থী হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন বলছে, এ পর্যন্ত ৪ জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছেন। আর হত্যাচেষ্টার পর বেঁচে গেছেন সাতজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও এক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।
হামলার শিকার প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা
প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসন: ১৮৬১ সালের দিকে আমেরিকা প্রাক-গৃহযুদ্ধের যুগে, ক্যাপিটলে একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেয়ার সময় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে গুলি করা হয়েছিল। বন্দুকধারী দুবার গুলি করলেও ডেমোক্র্যাটিক দলের এই প্রেসিডেন্টকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়।
প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট: ১৯১২ সালে ট্রাম্পের মতোই নির্বাচনী প্রচারের সময় হামলার শিকার হন এই রিপাবলিকান মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট। তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে করেছিল একজন সেলুনকর্মী।
প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট: ১৯৩৩ সালে মিয়ামিতে বন্দুকধারীর গুলির শিকার হন মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। বন্দুকধারী গুইসেপ্পে জাঙ্গারা তখন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে হত্যা করতে পারেনি, কিন্তু শিকাগোর মেয়র আন্তন সেরমাককে হত্যা করেন বন্দুকধারী।
প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান: রুজভেল্টের মৃত্যুর পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন হ্যারি ট্রুম্যান। ১৯৫০ সালে হোয়াইট হাউসে তার ওপর বন্দুক হামলা চালান পুয়ের্তো রিকান নামক এক জাতীয়তাবাদী।
প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড: ১৯৭৫ সালে পরপর দুবার হত্যা প্রচেষ্টার মুখোমুখি হন মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট। ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রামেন্টোতে ফোর্ডের উপর গুলি করার চেষ্টা চালায় বন্দুকধারী, কিন্তু গুলি করার আগেই তাকে ব্যর্থ করা হয়। প্রথম হামলার কয়েক সপ্তাহ পরে সারা জেন মুর নামে একজন নারী সান ফ্রান্সিসকোতে ফোর্ডকে গুলি করেছিলেন, কিন্তু একজন পথচারী তাকে ধরে ফেলায় গুলি মিস হয়।
প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান: ১৯৮১ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে হিলটনের বাইরে একটি বক্তৃতা দেওয়ার সময় তাঁকে গুলি করা হয়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি জেমস ব্র্যাডি রিগ্যানের চেয়ে গুরুতরভাবে আহত হন। পরে এই ব্যক্তি আমেরিকায় বন্দুক নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে কাজ করেন।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা: ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে হত্যার জন্য হোয়াইট হাউসে গুলি চালায় আইডাহোর এক ব্যক্তি। এই ঘটনায় ওই ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
আলাবামার গভর্নর জর্জ ওয়ালেস: ১৯৭২ সালে ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জর্জ ওয়ালেসের ওপর বন্দুক হামলা চালানো হয়। এ হামলার পর আলাবামার গভর্নর জর্জ ওয়ালেস পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
নিহত চার মার্কিন প্রেসিডেন্ট
আব্রাহাম লিংকন: আব্রাহাম লিংকন মার্কিন প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি হত্যার শিকার হয়েছেন। ১৮৬৫ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে ফোর্ডস থিয়েটারে মাথার পিছনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল আব্রাহাম লিংকনকে। সন্দেহভাজন নাটকের একজন অভিনেতা উইলকস বুথ ঘটনাস্থল থেকে তখন পালিয়ে গেলেও কয়েক সপ্তাহ পরে ভার্জিনিয়ায় ধরা পড়লে তাকে গুলি করা হয়।
জেমস গারফিল্ড: ১৮৮১ সালের জুলাই মাসে ওয়াশিংটন, ডিসির একটি ট্রেন স্টেশনে গুলিবিদ্ধ হন জেমস গারফিল্ড। আহত অবস্থায় কয়েক মাস পরে, সেপ্টেম্বরে নিউ জার্সিতে মারা যান তিনি। গারফিল্ডকে গুলি করে তারই সাবেক এক সমর্থক চার্লস গুইটাউ। গারফিল্ডের প্রশাসনে চাকরি না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে এ কাজ করেন তিনি। পরবর্তীতে গুইটাউকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ফাঁসি দেওয়া হয়।
উইলিয়াম ম্যাককিনলি: ১৯০১ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কের বাফেলোতে লিওন সিজলগোস নামক একজন নৈরাজ্যবাদীর দ্বারা গুলির শিকার হন উইলিয়াম ম্যাককিনলি। আহত অবস্থায় কিছুদিন পর মারাযান তিনি।
জন এফ কেনেডি: ১৯৬৩ সালের নভেম্বরে ডালাসে স্নাইপার লি হার্ভে অসওয়াল্ডের হাতে নিহত হন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি। গুলি করার কিছুদিন পর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল অসওয়াল্ডকে। ডালাস থানার বেসমেন্টে জ্যাক রুবির হাতে হত্যার শিকার হন অসওয়াল্ড।