সরকারি চাকরিতে বেতন কাঠামোর ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে (আগের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির) মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটাপদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত বহালে উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতিবাদে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে বর্তমানে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার বিকাল ৪ টা ১৫ মিনিটে পূর্বঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগ মোড়, বাংলামোটর, সায়েন্সল্যাব, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, কাওরানবাজার, ফার্মগেট অবরোধ করেছেন তারা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
বিকেল সাড়ে ৪টায় শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। প্রতিটি হল ও বিভাগ থেকে মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা গ্রন্থাগারের সামনে সমবেত হন। এরপর গ্রন্থাগারের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হলপাড়া-মুহসীন হল-ভিসি চত্বর-টিএসসি হয়ে শাহবাগে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে গিয়ে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।
শিক্ষার্থীদের অবরোধের মুখে গতকালের মতো আজও শাহবাগসহ আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন সড়কে তৈরি হয়েছে তীব্র যানজট। ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেছে নগরবাসীকে।
এদিকে, মিছিল ও অবরোধের সময় শিক্ষার্থীরা ‘অবরোধ অবরোধ-সারা বাংলা অবরোধ’, ‘দফা এক দাবি এক-কোটা নট কামব্যাক’, ‘বাধা দিয়ে আন্দোলন-বন্ধ করা যাবে না’, ‘কোটা না মেধা-মেধা মেধা’, আপস না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘আঠারোর পরিপত্র-পুনর্বহাল করতে হবে’, ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক-মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘সারা বাংলায় খবর দে-কোটাপ্রথার কবর দে’, ‘আমার সোনার বাংলায়-বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে-ছাত্র সমাজ জেগেছে’ স্লোগান দেন।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড় বন্ধ করে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এর ফলে এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর রোড এবং ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়কের যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, কোটা ব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত একটি ব্যবস্থা। এটি সাময়িক একটি সিদ্ধান্ত ছিল। যা পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়ভাবে চলমান ছিল। এর মাধ্যমে অযোগ্য ব্যক্তিরা চাকরির ক্ষেত্রে সুযোগ পেয়েছে। আমরা চাই যে কোনো মূল্যে কোটা বাতিল করা হোক। অন্যথায় এই আন্দোলন চলমান থাকবে।
অপরদিকে শিক্ষার্থীদের অবরোধের পর সায়েন্সল্যাব মোড়ে স্থানীয় নিউমার্কেট থানা ও ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ কর্মকর্তাদের অবস্থান করতে দেখা গেছে।
এদিকে, বিকেল পৌনে ৫টার দিকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে থেকে মিন্টু রোড পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে সড়কের দুপাশে কয়েকশো গাড়ি আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে গতকাল রোববার রাজধানীতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনকারীরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে। এতে কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে যোগাযোগ। সেখান থেকেই শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচি আজও চলবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।