কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ঈদগাহ ময়দানে জঙ্গি হামলার আট বছর পূর্ণ হলেও শেষ হয়নি বিচারকাজ। এখনও বিচারের অপেক্ষায় আছেন নিহতদের স্বজনেরা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত জঙ্গিদের নিরাপত্তাজনিত কারণে এতদিন আদালতে হাজির করা যায়নি। তবে সম্প্রতি তাদের হাজির করা হচ্ছে আদালতে।
২০১৬ সালের ৭ জুলাই ছিল ঈদুল ফিতরের দিন। কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজের জন্য সমবেত হয়েছিলেন মুসল্লিরা। নামাজ শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে জঙ্গিদের গুলি আর বোমায় কেঁপে ওঠে ঈদগাহের চারপাশ।
ঈদগাহের কাছে একটি নিরাপত্তা চৌকিতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে দুই পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে জঙ্গিরা। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন জঙ্গি আবির রহমান।
২০১৬ সালের ৭ জুলাইয়ের বিভীষিকা আজও ভুলতে পারেননি এলাকাবাসী। তারা বলছেন, সেদিন জঙ্গিরা পুলিশকে কুপিয়ে হত্যা করে। মসজিদের দোতলা থেকে সব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।
সেদিন নিজের ঘরের ভেতরে থেকেও গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন গৃহবধূ ঝর্ণা ভৌমিক। ঘটনার বিচার পাওয়ার অপেক্ষা শেষ হয়নি তাঁর স্বজনদের।
ঝর্ণা ভৌমিকের ছেলে বলেন, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই মারা গেছেন তার মা। আর কিছুদিন আগে মারা যান তার বাবা। বেঁচে থাকতে তার মাকে হত্যার বিচার তার বাবা দেখে যেতে পারলেন না। এই নিয়ে ছেলের মনে অনেক বড় আক্ষেপ রয়ে গেছে।
অভিযুক্ত জঙ্গিদের একাধিক মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থাকায় নিরাপত্তাজনিত কারণে এতদিন আদালতে হাজির করা যায়নি। তবে সম্প্রতি বাড়তি নিরাপত্তায় তাদের আদালতে হাজির করে সাক্ষীদের জবানবন্দি নেওয়া শুরু হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর আবু নাসের মো. ফারুক সঞ্জু বলেন, ‘এই আসামিরা হলি আর্টিজান মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তাদেরকে আমরা কোর্টে উপস্থিত করতে না পারা আমাদের ব্যর্থতা নয়। আইনের কারণে আমরা সাক্ষী নিতে পারিনি। ইদানিং বিশেষ কায়দায় তাদেরকে কিশোরগঞ্জ কারাগারে এনে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করি। এরইমধ্যে ১০২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬০ জনের সাক্ষী নেওয়া হয়েছে। মামলাটি এখন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। খুব শীঘ্রই তা শেষ হবে বলে আশা করি।
এ নিয়ে কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. রাসেল শেখ বলেন, ঘটনার পর পরই আমরা এর তদন্ত কার্যক্রম শুরু করি। এই তদন্তে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করি। এখানে ডিজিটাল ডিভাইসসহ যে সকল উপকরণ ও প্রত্যক্ষদর্শী ছিল সাক্ষ্য প্রমাণ হিসাবে সকল কিছু সংযোগ করেছি। আমরা আশা করি জঙ্গিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।
শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনের মামলায় আসামি ২৪ জন। তাদের মধ্যে পাঁচ জন কারাগারে। বাকিরা বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে মারা গেছেন।