রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই টানা কয়েকদিন ধরে চলছে বৃষ্টি। আর এর প্রভাব পড়েছে কাঁচাবাজারে। বাজারে বেশিরভাগ সবজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি। এ ছাড়া কাঁচা মরিচের কেজি দাঁড়িয়েছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায়। তবে মুরগি ও ডিমের দাম কমেছে সামান্য।
শুক্রবার (৫ জুলাই) রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার, কৃষি মার্কেট, কারওয়ান বাজার ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
এছাড়াও বাজারভেদে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা, রসুন ২২০ চাকা ও আদা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃষ্টির কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সরবরাহে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দামও বেড়েছে।
হাতিরপুল কাচা বাজারের সবজি বিক্রেতা কাউসার মিয়া বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে সবজির বাজার ২০-৩০ টাকা বেশি। এর প্রধান কারণ কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি। আগে ৬৪ জেলা থেকে মালামাল আসতো। এখন বেশকিছু জেলায় রাস্তাঘাট ভাঙ্গা। কোথাও কোথাও অনেকটা পথ ঘুরে তারপর পণ্য ঢাকায় ঢুকছে। তাই সরবরাহ খরচ বেশি হচ্ছে। বৃষ্টি কমলে দাম কিছুটা কমে আসবে।
সবজির দাম বাড়ার পেছনে বৃষ্টিকে বাস্তবতা হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার।
তিনি বলেন, আমি গত সপ্তাহে রংপুরে গিয়েছিলাম। সেখানকার লোকাল মার্কেটেও চড়া দাম; ঢাকার বাজারের প্রায় কাছাকাছি। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে বাজার বাড়তির দিকে। তাছাড়া এমনিতেই বর্ষা মৌসুমে সবজি কম উৎপাদন হয়। উঁচু জায়গায় করলা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল -- এগুলোই মূলত এ সময়ের সবজি। পটোলের মতো ক্ষেতে যেগুলো আবাদ হয়, অতিবৃষ্টি হলে কৃষকরা উঠাতে পারেন না। আবার গাছও মরে যায়। সে কারণে বাজারে সরবরাহ কমে গেছে।’
তবে কাঁচা মরিচের দাম এতো বেশি হওয়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে দায়ী করেছেন এ ব্যবসায়ী নেতা। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এমনিতেই একটু সুযোগ পেলে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। কারওয়ান বাজারে ব্যবসায়ীরা কাঁচামরিচের পাইকারি দাম ২৫০ টাকা বলছেন। খুচরায় যা বিক্রি করছেন ২৮০ টাকা কেজিতে, যা পুরোপুরি অযৌক্তিক। বাংলাদেশের কোথাও পাইকারিতে কাঁচামরিচের দাম এতো বেশি নেই। সরবরাহ ও চাহিদার সমন্বয় না থাকলে যেকোনো বাজারেই দামের তারতম্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলেই সেটা কাজে লাগাতে চায়।’
এদিকে, মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানি ঈদের পর বাজারে মুরগির চাহিদা কমায় দাম কিছুটা কমেছে। তবে আগের বাড়তি দামেই প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায় এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১১০০ টাকায়।
তবে সপ্তাহ ব্যবধানে ডজনে ১০ টাকা কমেছে ডিমের দাম। গত সপ্তাহে প্রতি ডজন ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চড়েছে মাছের দামও। কেজিতে ৩০-৫০ টাকা বেড়ে রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৮০-৪০০ টাকায়। তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০-৪০ টাকা। মাছ ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়ার পেছনে বৃষ্টিকেই দায়ী করে বলছেন, মাছের সরবরাহ কমেছে বাজারে; তাই বাড়তি দাম।
কারওয়ান বাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী রায়হান ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাছ-মাংস খাওয়া তো আগেই কমিয়েছি। সবজির বাজারও যদি হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়, আমরা সাধারণ মানুষ কী খেয়ে বাঁচব!