শিরোনাম: |
মালয়েশিয়ায় প্রবাসী কর্মী ও শরণার্থীদের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। দুই দিনের মালয়েশিয়ায় সফরের পর এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সমাজে অভিবাসীদের বিভিন্ন অবদান স্বীকৃতি, সম্মান ও প্রশংসার দাবি রাখে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশন কার্যালয়ের এক গবেষণার বরাতে ভলকার তুর্ক জানান, মালয়েশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ স্পষ্টভাবে দেশটির অর্থনীতি ও সমাজে প্রবাসী কর্মীদের অবদানকে স্বীকার করে। যখন সবার প্রতি সবার সমর্থন থাকে, তখন আমাদের সমাজ শক্তিশালী হয় বলে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৬৩ শতাংশ মনে করেন।
তিনি বলেন, অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকের বেশি মনে করেন, আমাদের অন্যদের সহযোগিতা করা উচিত, তারা যেই হোক বা যেখান থেকেই আসুক না কেন। অভিবাসী ও উদ্বাস্তুদের নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা এবং বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রতিরোধ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রোববার (২ জুন) মালয়েশিয়া পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী উতামা হাজি মোহাম্মদ বিন হাজি হাসান, অন্যান্য মন্ত্রী, মালয়েশিয়ার জাতীয় মানবাধিকার ইনস্টিটিউশন এবং নাগরিক সমাজের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভলকার তুর্ক।
এছাড়া মিয়ানমারের সংকট, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়েও তিনি কথা বলেন এবং আসিয়ানের পরবর্তী চেয়ার হিসেবে মালয়েশিয়াকে তাদের ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দেন।
মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জরুরি সমাধানের ওপর জোর দিয়ে ভলকার তুর্ক বলেন, একটি সমাজ সবচেয়ে দুর্বলদের সঙ্গে কেমন আচরণ করে, তা দিয়ে তাদের অগ্রগতি পরিমাপ করা যায় এবং প্রকৃতপক্ষে এটি সামাজিক ও মানবাধিকার সুরক্ষার একটি লিটমাস পরীক্ষা।
এদিকে মঙ্গলবার (৪ জুন) মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে ভলকার তুর্ক মালয়েশিয়াকে সতর্ক করে বলেছেন, ব্যবসা ক্ষেত্রে মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার না দিলে ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য মালয়েশিয়ার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
তুর্ক বলেছেন, মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনায় ব্যবসা এবং মানবাধিকার বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। ব্যবসা এবং মানবাধিকার বিষয়গুলো আমাদের আলোচনার অংশ ছিল। কারণ আমরা জানি, যে যখন ব্যবসায় মানবাধিকার চর্চা করা না হয় তবে এটি ভবিষ্যতে (বিদেশি বিনিয়োগের) ক্ষতি করবে।
জাতিসংঘ এর আগে মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীর চাকরিকে কেন্দ্র করে সংঘটিত অপরাধ এবং মানবপাচারের অধিক সংখ্যক ঘটনা থাকায় সে সম্পর্কে জাতিসংঘের উদ্বেগ মালয়েশিয়াকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে- বিদেশি কর্মীদের নিয়োগকারী সংস্থাগুলো মিথ্যা অজুহাতে মালয়েশিয়ায় আনা হচ্ছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের দুর্দশার দিকেও সাম্প্রতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, যারা শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের আশা নিয়ে এসেছিলেন কিন্তু নিজেদের দুর্দশাজনক পরিস্থিতিতে খুঁজে পেয়েছেন।
তুর্ক বলেন, অভিবাসন-সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় ২০ বছর আগের তুলনায় অনেক বেশি উদারতা লক্ষ্য করেছেন।
তিনি বলেন, আমি বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জেনেছি, এখানে বন্দিদের জন্য কঠোর ব্যবস্থা বিদ্যমান এবং তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয় যা বেশ উদ্বেগজনক। এসব বিষয়ে তদন্ত করা দরকার। মালয়েশিয়াকে অবশ্যই জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা এবং অন্যান্যদের জন্য ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে যাতে তাদের উপর আনিত অভিযোগ (নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার) পরীক্ষা করে দেখতে পারে।
জাতিসংঘ এর আগে মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থানকে কেন্দ্র করে সংঘটিত অপরাধ এবং মানবপাচারের ঘটনায় জাতিসংঘের উদ্বেগ মালয়েশিয়াকে জানিয়ে দিয়ে বলেছিলো, বিদেশি কর্মীদের নিয়োগকারী সংস্থাগুলো মিথ্যা প্রলোভনে মালয়েশিয়ায় আনছে। যারা অভিবাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের আশা নিয়ে এসেছিলেন তারা দুর্দশাজনক পরিস্থিতিতে পড়েছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশি কর্মীদের দুর্দশার দিকেও সম্প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে তুর্ক বলেন, অভিবাসন-সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় মালয়েশিয়াকে ২০ বছর আগের তুলনায় অনেক বেশি উদারতা লক্ষ্য করেছেন। এবং তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, মালয়েশিয়া এ সমস্যা সম্পর্কে সচেতন আছে এবং এগুলো মোকাবেলা করতে চায়।
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, বেনার নিউজ
দেশসংবাদ/এমএম/এমএইচ
আপনার মতামত দিন
|