চৈত্রের কাঠফাটা রোদ আর গরম অনুভূত হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আবহাওয়া যতই প্রতিকূলে থাকুক না কেন, চৈত্র মাস এলেই পাহাড়ের মানুষের মনে ও শরীরে অন্য রকম আবেশ ছড়িয়ে পড়ে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে এখন পাহাড়জুড়ে বাজছে বৈসাবির সুর। তবে এ বছর কেএনএফ'র ব্যাংক ডাকাতি ও ম্যানেজার অপহরণের ঘটনায় চরম প্রভাব পড়েছে রুমা, থানছি ও রোয়াংছড়ি উপজেলাসহ বান্দরবনে। এর প্রভাব রয়েছে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতেও। তাই এবার বৈসাবি উদযাপনে নেই পর্যটকের চাপ।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সকাল সাতটার বান্দরবান রোয়াংছড়ি স্টেশন এলাকার সাঙ্গু নদীর ঘাটে এসে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের লোকজন সব জাতির মঙ্গল কামনা করে সাঙ্গু নদীতে ফুল ভাসিয়ে তাদের ঐহিত্যবাহী ফুল বিজু উদযাপন করেছে। আর এ ফুল বিজু মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষকে নববর্ষের শুভেচ্ছাও জানায় তারা। এতে অংশ নেয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীরা।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ১২টি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাংলাবর্ষকে বিদায় জানানোর এ অনুষ্ঠান তাদের প্রধান সামাজিক উৎসব হিসেবে বিবেচিত। এই উৎসব চাকমা জনগোষ্ঠী বিজু নামে, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী বৈসুক, মারমা জনগোষ্ঠী সাংগ্রাই, তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী বিষু, কোনো কোনো জনগোষ্ঠী বিহু নামে পালন করে থাকে। এই ‘ফুল বিজু'র মাধ্যমে গঙ্গাদেবীর মঙ্গল কামনায় ও পুরানো বছরের সব দুঃখ, গ্লানি ধুয়ে মুছে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় তারা। এর মাধ্যমে বান্দরবানে শুরু হলো চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের বর্ষবরণের আয়োজন।
এদিকে ১৩এপ্রিল থেকে বান্দরবানে শুরু হচ্ছে চার দিন ব্যার্পী মারমাদের মহা: সাংগ্রাই পোয়ে: অনুষ্ঠান। এই উৎসবে প্রধান আকর্ষণ জলকেলি (পানি বর্ষণ)। ১৫ ও ১৬ এপ্রিল দুইদিন এই জনকেলি উৎসবটি অনুষ্ঠিত হবে শহরে রাজার মাঠে।
অন্যদিকে খাগাছড়িতে ফুল বিজুর মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী প্রাণের উৎসব বৈসাবি।
ফুল বিজুর দিনে এই জনপদের মানুষ সকালে ফুল তুলে চেঙ্গী, মাইনি নদীর তীর ও বিভিন্ন নালা, খাল বিল, পুকুর ও কুয়ার ঘাটে বেদি তৈরি, বেদিতে ফুল পুজা করে গঙ্গা মায়ের উদ্দেশে প্রার্থনা করে পুরাতন বছরকে বিদায় দিয়েছেন। একই সঙ্গে পুরাতন বছরে সব দুঃখ-কষ্ট দূর হয়ে নতুন বছরে সবাই শান্তিতে কাটাতে পারেন সেই প্রার্থনা করেছেন।
এই ফুল বিজু উৎসবটি ভোর থেকে শুরু হয়ে চলে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। উৎসবে ফুলে ফুলে ভরে উঠে নদীর পাড়গুলো, উৎসবে মেঠে উঠে সবাই। এই উৎসবে চাকমা, মারমা ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী ছাড়াও বেশ কিছু পর্যটক ও স্থানীয় বাঙালি এই উৎসব উপভোগ করেন।