শিরোনাম: |
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কঠোর সমালোচনায় বিদ্ধ করেছেন সাবেক ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা। তিনি বলেছেন, ‘যতটা সম্ভব পরিষ্কার করে বলার চেষ্টা করছি- ডোনাল্ড ট্রাম্প আমাদের দেশের ভুল প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প নিজেকে প্রমাণ করার যথেষ্ট সময় পেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি এমন কোনো ব্যক্তি নন, যাকে আমাদের প্রয়োজন।’
চার দিনব্যাপী ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় কনভেনশনের প্রথমদিন সোমবার এমন কাটছাঁট কথার জাদুতে দেশ মাতালেন সাবেক এ প্রেসিডেন্ট-পত্নী।
সম্মেলনের দ্বিতীয় রাত স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল) ভাষণ দেবেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। তিনি কিভাবে শো মাতাবেন সেটাই দেখার অপেক্ষায় মার্কিনিরা। খবর রয়টার্স, বিবিসি ও এএফপির।
‘ঐক্যবদ্ধ আমেরিকা’ স্লোগানে ১৭ আগস্ট থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় কনভেনশন শুরু হয়েছে। প্রথমদিনের থিম হল ‘উই দ্য পিপলস’। কনভেনশনের সঞ্চালক ছিলেন মার্কিন অভিনেত্রী ইভা লঙ্গোরিয়া। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ভার্চুয়াল এ সম্মেলনের শুরুর দিনেই ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা করেন মিশেল ওবামা।
আমেরিকার ইতিহাসে সম্ভবত তিনিই কোনো সাবেক ফার্স্টলেডি, যিনি ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্টের সরাসরি সমালোচনা করে বক্তব্য দিলেন। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্টরাও সাধারণত কোনো ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের বিপক্ষে কথা বলেন না। আর ফার্স্টলেডিরা সব সময় রাজনৈতিক বক্তব্য এড়িয়ে চলেন। এক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রমী পথে হাঁটলেন মিশেল।
ট্রাম্পের সমালোচনা করে সাবেক ফার্স্টলেডি বলেন, ‘তিনি যে (প্রেসিডেন্টের) কাজ চালাতে পারেন, তা প্রমাণের জন্য প্রচুর সময় পেয়েছিলেন। কিন্তু করোনা ভাইরাস মহামারী, অর্থনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতি আর বর্ণবৈষম্যের চক্করে ঘুরপাক খাওয়া একটি দেশের সময়ের চাহিদা পূরণ করতে পারেননি।’
ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভুল প্রেসিডেন্ট’ অ্যাখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা হোয়াইট হাউসে পেয়েছি বিশৃঙ্খলা, বিভক্তি এবং সহমর্মিতার ভয়াবহ ঘাটতি।
তিনি (ট্রাম্প) সেই লোক নন, যাকে আমাদের প্রয়োজন। আপনাদের যদি মনে হয়, পরিস্থিতি এর চেয়ে খারাপ হওয়া সম্ভব নয়; বিশ্বাস করুন, এর চেয়েও খারাপ হতে পারে। তারা তা করবে, যদি এ নির্বাচনে আমরা পরিবর্তন না আনতে পারি। এই বিশৃঙ্খলা বন্ধের কোনো আশা যদি আমাদের থাকে, তাহলে বাইডেনকে এমনভাবে ভোট দিতে হবে যেন আমাদের জীবনও এর ওপর নির্ভর করছে।’
বাইডেনকে বিপুলসংখ্যক ভোটে জয়ী করার আহ্বান জানিয়ে নির্বাচনের দিন ভোটারদেরকে আরামদায়ক জুতা ও মাস্ক পরার পাশাপাশি কেন্দ্রগুলোতে দীর্ঘ লাইন বিবেচনায় ব্যাগে রাতের খাবার এমনকি পরদিন সকালের নাস্তাও নিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন মিশেল। তিনি বলেছেন, ‘যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে সারারাত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকারও ইচ্ছা থাকতে হবে আমাদের।’
বাইডেনের জীবনের মর্মান্তিক কাহিনী তুলে ধরে মিশেল বলেন, ‘যখন তিনি শিশু তখন তার বাবা চাকরি হারান। যখন তিনি তরুণ সিনেটর তখন তার স্ত্রী ও মেয়ে মারা যান। এবং যখন তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট তখন তার প্রিয় পুত্রকে হারান।
মিশেল বলেন, ‘আমি জানি, আমার বক্তব্য কোনো কোনো মহলে পাত্তা পাবে না। আমি একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে ডেমোক্রেটিক পার্টির কনভেনশনে বক্তব্য দিচ্ছি। অনেকেই জানেন, আমি নিজে যা মনে করি, তাই বলি।
আপনারা জানেন, আমি রাজনীতিকে ঘৃণা করি। আপনারা এও জানেন, আমি এ দেশটাকে নিয়ে ভাবি। দেশকে আমার প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। দেশের মানুষের ব্যথা আমাকেও ব্যথিত করে।’
শুরুর দিনের সম্মেলনে করোনা ভাইরাসে বাবাকে হারানো ক্রিস্টিন উইকুরজা বলেন, ‘আমার বাবা ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন, আর তাকে বিশ্বাস করেই বাবার মৃত্যু হয়েছে। আমি অবশ্যই জো বাইডেনকে ভোট দেব।’ ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন প্রার্থী থাকা বার্নি স্যান্ডার্স বলেন, ‘আমরা নজিরবিহীন সংকটের মুখে পড়েছি।
গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে রয়েছে। গণতন্ত্র এবং শালীনতার সুরক্ষায় আমাদের লড়াই করতে হবে। রুখে দাঁড়াতে হবে লোভ ও কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে।’ স্যান্ডার্স নিজের সমর্থকদের বাইডেনকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘রোম যখন আগুনে পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল, আর ট্রাম্প গলফ খেলছেন।
ট্রাম্প শুধু গণতন্ত্রের জন্যই হুমকি নন, বিজ্ঞানকে প্রত্যাখ্যান করে তিনি আমাদের জীবন ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আমাদের বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে।’
সম্মেলনে নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো বলেন, ‘করোনা তখনই সংক্রমিত হয়, যখন শরীর দুর্বল থাকে এবং প্রতিরোধ করতে পারে না। কয়েক বছর ধরে আমেরিকার প্রশাসন দুর্বলতর হয়েছে, বিভক্তি চরমে পৌঁছেছে।
মহামারীকালীন সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের নেতৃত্ব প্রয়োজন, যে নেতৃত্ব আমাদের ঐক্যবদ্ধ করবে, বিভক্ত নয়। আর সেটি জো বাইডেনই করতে পারেন।’ ডেমোক্রেটিক দলীয় কনভেনশনে জাতীয়ভাবে পরিচিত বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান বক্তব্য দেন।
দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া নিউজার্সির সাবেক গভর্নর ক্রিস্টি উইটম্যান এবং ওহাইওর সাবেক গভর্নর জন কাসিচ তাদের অন্যতম। ২০১৬ সালে রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট মনোনয়নপ্রার্থী জন কাসিচ রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বক্তব্য দেন।
বলেন, ‘সারা জীবন রিপাবলিকান ছিলাম। কিন্তু দেশের প্রতি আমার দায়িত্ব এর চেয়ে বড়। স্বাভাবিক সময়ে আমি কখনই ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্মেলনে আসতাম না। কিন্তু এখন সময় স্বাভাবিক নয়।’
এ কনভেনশনের দ্বিতীয়দিন মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে ১১টার (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৭টা থেকে ৯টা) মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন গ্রহণ করবেন জো বাইডেন। এ দিনের থিম হল ‘লিডারশিপ ম্যাটারস’। এদিন বক্তব্য দেবেন বিল ক্লিনটন ও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেনের স্ত্রী জিল বাইডেন।
আপনার মতামত দিন
|