শিরোনাম: |
কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সঙ্গে বিবাদীপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার মামলার তদন্তভার র্যাবকে দেয়া হয়েছে।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে টেকনাফে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালত এ আদেশ দেন।
সিফাতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মোস্তফা জানান, সিফাতের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলায় জামিন আবেদন করা হয়। পাঁচ হাজার টাকা বন্ডে সিফাতের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক। একই সঙ্গে মামলার তদন্তভার র্যাবকে দেয়া হয়েছে। এত দিন মামলা দুটির তদন্ত পুলিশ করছিল।
অ্যাডভোকেট মো. মোস্তফা জানান, সিফাতের নামে রামু থানায় একটি মাদক এবং টেকনাফ থানায় মাদক ও হত্যা মামলা করে পুলিশ। এই মামলাগুলো এখন থেকে তদন্ত করবে র্যাব।
এর আগে ওই ঘটনায় রোববার রামু থানায় করা অপর একটি মামলায় জামিন হয় সিনহার আরেক সহযোগী স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি ছাত্রী শিপ্রা দেবনাথের। জামিনের পর ওই দিনই কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি মামলা হয়। একটি মামলায় হয় টেকনাফ থানায়। এই মামলায় সরকারি কাজে বাধা ও গুলিতে নিহত হওয়ার অভিযোগ আনা হয়। সেই মামলার আসামি করা হয় সিফাতকে। আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে রামু থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় আসামি করা হয় শিপ্রা দেবনাথকে।
৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন বাদী হয়ে একই আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, থানার এসআই নন্দলাল রক্ষিতসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরের দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকত, এসআই নন্দলাল রক্ষিতসহ ৭ পুলিশ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। একই আদালত র্যাবের পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকত ও এসআই নন্দলাল রক্ষিতকে সাত দিনের রিমান্ড এবং অপর চার আসামি কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন ও এসআই লিটনকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। অপর দুই আসামি এসআই টুটুল ও মো. মোস্তফা আদালতে হাজির হননি। পুলিশের দাবি, এই নামে জেলা পুলিশে কেউ নেই।
র্যাব গত শনি ও গতকাল রোববার কারাফটকে চার আসামির জিজ্ঞাসাবাদ সম্পন্ন করেছে। আজ ওসি প্রদীপসহ অপর এক আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে। বর্তমানে আসামিরা জেলা কারাগারে আছেন।
আদালত প্রাঙ্গণে সিফাতের আইনজীবী ও জেলা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, আমরা পুলিশের সাজানো মামলা থেকে সিফাতের মুক্তি এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে র্যাবের কাছে হস্তান্তরের আবেদন জানিয়েছিলাম। আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ পাঁচ হাজার টাকা জিম্মায় সিফাতকে জামিন দিয়েছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে র্যাবকে ন্যস্ত করেছেন। সিনহা হত্যা মামলার একমাত্র সাক্ষী সিফাতকে র্যাব হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আইনি কোনো সমস্যা নেই।
সিফাতের মামা মাসুম বিল্লাহ বলেন, সিফাত কারাগারে আছে। আজকের মধ্যে কাগজপত্র জমা দিয়ে তাকে মুক্ত করতে পারব বলে আশা করছি।
৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
পরে গত বুধবার তার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে আদালতে মামলা করলে আদালত মামলাটি টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নথিভুক্ত করার আদেশ দেন।
পাশাপাশি র্যাব ১৫-এর কমান্ডারকেও তদন্ত করার নির্দেশ দেন। পরে বৃহস্পতিবার বিকালে এ মামলায় ওসি প্রদীপসহ সাত আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। বর্তমানে সবাই কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছেন।
দেশসংবাদ/জেআর/এনকে
আপনার মতামত দিন
|