শিরোনাম: |
ইসলাম রসকসহীন ও আনন্দ বিনোদন মুক্ত কোনো দ্বীন নয়। এখানে রয়েছে নির্মল ও হালাল বিনোদন এর সুব্যবস্থা। ঈদের দিন হলো তার উপযুক্ত সময়। যাবতীয় অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা মুক্ত ঈমানী শক্তি বৃদ্ধিকারক যেকোনো বিনোদন ইসলাম সমর্থন করে। ঈদুল আযহা মুসলিমদের ঘরের কড়া নাড়ছে । মুসলিমদের প্রতি বছর দুটি পবিত্র ঈদ ও উৎসবের দিন হলো ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরের দিন। মুসলিমদের জন্য ঈদের আনন্দের পাশাপাশি ইবাদতটাও মূখ্য বিষয়। আমরা ঈদের দিনের সুন্নাহসম্মত কিছু আমলের পাশপাশি পরিবারের সাথে আনন্দ বিনোদনে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে পারি। সুন্নাত আমল সমূহ হলো নিম্নরূপ:
এক. জামায়াতের সহিত ফজর সালাত আদায় করা।
দুই. মিসওয়াক করা। রাসুল (সা.) বলেন, আমার উম্মতের যদি কষ্ট না হতো তাহলে আমি প্রত্যেক সালাতের সময় তাদের মেসওয়াক করতে আদেশ দিতাম। (সহিহ বুখারি-861)
তিন. গোসল করা। হাদিসে এসেছে ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত:তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদহার দিন গোসল করতেন।
চার.সামর্থ অনুপাতে উত্তম পোশাক পরিধান করা। নবী (সা) এর হুল্লা নামক বিশেষ এক ধরনের একটি পোশাক ছিল যা তিনি জুমআ ও ঈদের সালাত আদায়ের সময় পরিধান করতেন। তবে অহংকার প্রকাশ পায় এমন পোশাক মানুষকে আখিরাত বিমুখ করে দেয়। আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাজারে বিক্রি হচ্ছিল এমন একটি রেশমী জুব্বা নিয়ে উমর (রা.) নাবী (সা.)এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুল! আপনি এটি কিনে নিন। ঈদের সময় এবং প্রতিনিধি দলের সংগে সাক্ষাতকালে এটি দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করবেন। তথন রাসুল (সা.) তাকে বললেনঃ এটি তো তার পোষাক, যার (আখিরাতে) কল্যাণের কোন অংশ নেই। এ ঘটনার পর উমর (রা.) আল্লাহর যত দিন ইচ্ছা ততদিন অতিবহিত করলেন। তারপর রাসুল (সা.) তার নিকট একটি রেশমী জুব্বা পাঠালেন, উমর (রা.) তা গ্রহন করেন এবং সেটি নিয়ে রাসুল (সা.)এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুল (সা.)! আপনি তো বলেছিলেন, এটা তার পোষাক যার (আখিরাতে) কল্যাণের কোন অংশ নাই। অথচ আপনি এ জু্ব্বা আমার নিকট পাঠিয়েছেন। তখন রাসুল (সা.) তাকে বললেনঃ তুমি এটি বিক্রি করে দাও এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থে তোমার প্রয়োজন মিটাও।
(সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বরঃ 901)
পাচ. সুগন্ধি ব্যবহার করা। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং-৭৫৬০)
ছয়. ঈদুল আজহার সময় ঈদগাহে যাবার আগে কিছু না খেয়ে ঈদের নামাযের পর নিজের কুরবানীর গোশত আহার করা উত্তম। (বুখারি, ৯৫৩, তিরমিজী -৫৪২)।
সাত. ঈদের সালাতের জন্য সকাল সকাল ঈদগাহে রওয়ানা হওয়া সূন্নাত। ঈদের সালাত ঈদগাহে আদায় করা, বিনা অপরাগতায় মসজিদে আদায় না করা। (সহিহ বুখারি-৯৫৬, আবু দাউদ-১১৫৮)
আট. যে রাস্তায় ঈদগাতে যাবে, ফিরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরা। হাদিসে এসেছে, যাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ঈদের দিন (বাড়ী ফেরার সময়) ভিন্ন পথে আসতেন।(সহিহ বুখারি- ৯৩৪)।
নয়.শারীরিক কোনো সমস্যা বা ঈদগাহ বেশি দূরত্বে না হলে পায়ে হেটে যাওয়া। (আবু দাউদ-১১৪৩)
দশম.নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধা এমনকি ঋতুবর্তী নারীদেরও ঈদের সালাতে অংশগ্রহণ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ব্যাপারে আদেশ করেছেন এবং সাহাবাগণ এর যুগে এ ধরনের আমল পাওয়া যায়। উম্মে আতীয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে) যুবতী ও পর্দানশীন মেয়েদের নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের আদেশ করা হত। আইয়্যুব (রহঃ) থেকে হাফসা (রাঃ) সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত আছে এবং হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েতে অতিরিক্ত বর্ণনা আছে যে, ঈদগাহে ঋতুমতী মহিলারা আলাদা থাকতেন।(সহিহ বুখারি-৯২৩ )।
এগারতম.ঈদগাহে যাবার সময় মহিলারা আস্তে আস্তে এবং পুরুষরা জোরে জোরে এই তাকবীর পড়তে থাকাঃ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
(মুস্তাদরাকে হাকেম-১১০৫)
বারোতম. বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) কুরবানীর দিন আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিতেন। তিনি বলেন, আজাকের দিনে আমাদের প্রথম কাজ হল সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা। তারপর ফিরে এসে কুরবানী করা। যে ব্যাক্তি এরূপ করবে সে আমাদের নিয়ম পালন করল। যে ব্যাক্তি সালাতের আগেই যবেহ করবে, তা শুধু গোশতের জন্যই হবে, যা সে পরিবারের জন্য তাড়াতাড়ি করে ফেলেছে। কুরবানীর সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। (সহিহ বুখারি -৯১৭)।
তেরোতম. ইসলাম রসকসহীন ও আনন্দ বিনোদন মুক্ত কোনো দ্বীন নয়। এখানে রয়েছে নির্মল ও হালাল বিনোদন এর সুব্যবস্থা। ঈদের দিন হলো তার উপযুক্ত সময়। যাবতীয় অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা মুক্ত ঈমানী শক্তি বৃদ্ধিকারক যেকোনো বিনোদন ইসলাম সমর্থন করে। হাদীসে এসেছে:
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন তখন আমার নিকট দু’টি মেয়ে বু’আস যুদ্ধ সংক্রান্ত কবিতা আবৃত্তি করছিল। তিনি বিছানায় শুয়ে পড়লেন এবং চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখলেন। এ সময় আবূ বকর (রাঃ) এলেন, তিনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, শয়তানী বাদ্যযন্ত্র (দফ্) বাজানো হচ্ছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, তাদের ছেড়ে দাও। তারপর তিনি যখন অন্য দিকে ফিরলেন তখন আমি তাদের ইঙ্গিত করলাম এবং তারা বের হয়ে গেল। আর ঈদের দিন সুদানীরা বর্শা ও ঢালের দ্বারা খেলা করত। আমি নিজে (একবার) রাসুল (সা.) এর কছে আরয করেছিলাম অথবা তিনি নিজেই বলেছিলেন, তুমি কি তাদের খেলা দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ, তারপর তিনি আমাকে তাঁর পিছনে এমনভাবে দাঁড় করিয়ে দিলেন যে, আমার গাল ছিল তার গালের সাথে লাগান। তিনি তাদের বললেন, তোমরা যা করতে ছিলে তা করতে থাক, হে বনু আরফিদা। পরিশেষে আমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, তথন তিনি আমাকে বললেন, তোমার কি দেখা শেষ হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ, তিনি বললেন, তা হলে চলে যাও। (সহিহ বুখারি-৯০২)
চোদ্দতম . ঈদের দিনে সাহাবাগণ পরস্পরকে "তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম" বলে অভিবাদন জানাতেন।
পনেরতম. কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে তার মূল্য দান করে দেয়া, একটি গ্রহণযোগ্য অভিমত। এর স্বপক্ষে কয়েকজন ইমামের রায় ও ইবন ‘উমার (রা)-এর আমল পাওয়া যায়। এ আমলটি আমাদের সমাজে ব্যাপকহারে প্রচলিত। তাই ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগে এই অভিমত একেবারে চেপে যাওয়া কিছুতেই উচিত হবে না। আপনি ভিন্নমত উল্লেখ করতে পারেন। প্রচলিত আমলটি দলিলসম্মত। এটিও ঈদের দিনের সুন্নাত আমল।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে আনন্দ ও বিনোদনের পাশপাশি রাসুল (সা.) এর সুন্নাত অনুযায়ী ‘আমল করার তাওফীক দান করুন। আমিন।
লেখক পরিচিতি
প্রফেসর ড. সাইফুল গনি নোমান,
আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
কুষ্টিয়া।
দেশসংবাদ/প্রতিনিধি/এফএইচ/বি
আপনার মতামত দিন
|